Logo
Logo
×

শেষ পাতা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩০০ কর্মকর্তার নামে সেফ ডিপোজিটর

ব্যাংকের লকারে দুদকের নজর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংকের লকারে দুদকের নজর

ফাইল ছবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজর এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় রক্ষিত লকার বা সেফ ডিপোজিটরে। সুরক্ষিত এসব লকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে প্রায় তিনশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অর্থ সম্পদ নিরাপদে জমা রেখেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নামেও লকার রয়েছে। মূলত ওইসব লকারেই নজর সংস্থাটির। এগুলোতে দুর্নীতিবাজদের অনেক অর্থ সম্পদ ও গোপনীয় কাগজপত্র থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ কারণে দুদক ওইসব লকার খুলে রক্ষিত অর্থ সম্পদ দেখতে চায়। সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আয় ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা। যদি অসঙ্গতিপূর্ণ বা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত কিংবা অপ্রদর্শিত কিছু থাকে তবে সেগুলোর সূত্র ধরে তদন্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার আদালত লকার খোলার অনুমতি দিয়েছেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় দুদক কর্মকর্তারা ওইসব লকার খুলে রক্ষিত অর্থ সম্পদ ও অন্যান্য গোপন দলিলপত্রের তালিকা তৈরি করবেন। এতে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে সেগুলোর বিষয়ে পরে তদন্ত চলবে।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার আদালত থেকে আদেশ দিলেও এর কপি এখনো দুদক পায়নি। এটি বৃহস্পতিবার পাওয়ার আশা করছে সংস্থাটি। এটি পেলেই তারা অভিযানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যাবেন। এদিকে আদালতের শুনানির পর লকার তল্লাশির আদেশ পাওয়ার পরই দুদক থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে মেহেদী হাসানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ হিসাবে বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ পাওয়া গেলে বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লকার তল্লাশিতে যেতে পারে। অন্যথায় রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লকার তল্লাশিতে যাবে দুদক। তবে এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষী দেওয়ার কাজে এখন রাজশাহী আছেন। তিনি ঢাকায় ফিরলেই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ হিসাবে রোববারই অভিযান হতে পারে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান ও দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৩০০ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা লকারের মতো আলমিরার মধ্যে বিভিন্ন বক্সে অর্থ সম্পদ জমা রেখেছেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সেগুলো খোলার অনুমতি পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বা রোববার এ অভিযান পরিচালনা হতে পারে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর লকারে ৫ কোটি টাকার অর্থ সম্পদ পাওয়ার পর অন্যদের লকারগুলোতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্র্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সাবেক বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতিসহ দেশ থেকে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে লকার রয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে ভল্টের পাশে আলমিরার ভেতরে লকারের মতো কিছু সুরক্ষিত একাধিক বক্স রয়েছে। এগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা তাদের অর্থ সম্পদ বা মূল্যবান উপকরণ সেখানে ডিপোজিট হিসাবে রাখতে পারেন। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও লকার সুবিধা রয়েছে। সেগুলো তারা গ্রাহকদের কাছে ভাড়া দেয়। এগুলোর সেবা অত্যন্ত গোপনীয়। লকারে যেসব অর্থ সম্পদ বা মূল্যবান সামগ্রী রাখা হবে সেগুলোর তথ্য গ্রাহক ছাড়া অন্য কেউ জানবে না। লকারের দুটি চাবি থাকে। একটি চাবি দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা লকার খোলার সুযোগ করে দেন। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা চলে যান। তারপর গ্রাহক তার নিজস্ব চাবি দিয়ে লকার খুলে তিনি অর্থ সম্পদ রাখতে বা তুলে নিতে পারেন। এতে ব্যাংকে কোনো নিবন্ধন করতে হয় না। তবে লকার পরিচালনার নীতিমালা অনুযায়ী এতে কোনো অবৈধ কিছু রাখা যাবে না। গ্রাহক ছাড়া অন্য কেউ লকার খুলতে হলে আদালতের অনুমোদন লাগে। এছাড়া কোনো লকার খোলার সুযোগ নেই।

এদিকে ২ ফেব্রুয়ারি দুদক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়ে কেউ যাতে লকার খুলতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখার লকার আর কাউকে খুলতে দেওয়া হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকার ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা ব্যবহার করতে পারেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, লকার সুবিধা শুধু বর্তমান কর্মকর্তাদের দেওয়ার জন্য। সাবেক কর্মকর্তাদের নামে লকার সুবিধা বন্ধ করার দাবি করেছেন তারা।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লকার বা সেফ ডিপোজিটর নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা অচিরেই কাজ শুরু করবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম