হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা
ফাঁসির ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর সবাই খালাস পেয়েছেন। যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে বাকিদের সাজা দেওয়া হয়। বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। আমরা চাই না-তারা আর এক সেকেন্ডও কারাগারে থাকুক। এখনই সবাইকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করছি। এদিকে মহান ভাষা আন্দোলনের মাস হওয়ায় এ মামলায় বাংলায় রায় দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ। রায়ের পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত বাংলায় ঘোষণা করেন আদালত।
রায় ঘোষণার আগে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, মামলার বিষয়বস্তু বিস্তৃত। চুম্বক পয়েন্ট ও সংক্ষিপ্ত আদেশ ঘোষণা করা হবে। ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। রায় তাই বাংলায় দেওয়া হচ্ছে। এর আগে আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর ৩১ জানুয়ারি শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য আজকের দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় রায় ঘোষণা করা হয়। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল, জামিল আক্তার এলাহী, এএইচএম কামরুজ্জামান মামুন, গাজী তৌহিদুল ইসলাম, মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলাকে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩ জুলাই স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী রায় দেন। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্তরা সবাই বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মী।
মামলার আসামিরা হলেন-তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র শামসুল আলম, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি একেএম আখতারুজ্জামান, বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম ভিপি শাহিন, বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম অটল, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন, ছাত্রদল নেতা মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল। তাদের মধ্যে বাবলু, পলাশ ও শাহিন আপন তিন ভাই।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, দুপুরে ঢাকায় রায় ঘোষণার পর ঈশ্বরদীতে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন বিএনপির বহু সংখ্যক কর্মী। কারামুক্ত ৯ নেতাকে ঈশ্বরদীতে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি : সুপ্রিমকোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মামলার রায় ঘোষণার পর আইনজীবীদের বক্তব্য নিতে অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে ঈশ্বরদী বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আখতারের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে কয়েকজন তাকে লাথি, কিল-ঘুসি মারেন। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম পান্নু, হাসান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন লাঞ্ছিত হন। মাইক্রোফোনও ভাঙচুর করা হয়। ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাবেদ আখতারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।