পাচারের অর্থ ফেরাতে সহায়তা দেবে কানাডা

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কানাডা থেকে বাংলাদেশিদের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ ফেরাতে সহায়তা দেবে দেশটি। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং। তিনি জানান, শিগগিরই কানাডিয়ান একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করবেন। এর আগে পাচারের অর্থ ফেরাতে কানাডার সহায়তা চান ড. ইউনূস। এ সময়ে বাংলাদেশে কানাডার বিনিয়োগ বাড়ানো এবং ঢাকায় দেশটির পূর্ণাঙ্গ ভিসা অফিস স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে যেসব দেশে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে, তার মধ্যে কানাডা অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে। দেশটির বিখ্যাত শহর টরেন্টোতে সম্পদ কিনে বাংলাদেশিরা ‘বেগমপাড়া’ গড়ে তুলেছেন। যার পুরোটাই পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এই তালিকায় রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংকাররা রয়েছেন। এবার ওই সম্পদ ফেরাতে কানাডা সরকারের সহায়তা চাইলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অবৈধ সম্পদ চিহ্নিত, জব্দ করা এবং পুনরুদ্ধারে এ সহায়তা চাওয়া হয়।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামল ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা গত ৫ বছরে দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরের পাচারের অর্থ দিয়েই ৭৮টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন উপায়ে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিং, নগদ মানি লন্ডারিং, ব্যাংক, শেয়ারবাজার এবং বিমা খাত ব্যবহার, অনলাইন পেমেন্ট, হুন্ডি, ব্যাংক গ্যারান্টির অপব্যবহার এবং স্বর্ণ স্মাগলিং অন্যতম। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের কথা বলা হয়েছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে জড়িত অলিগার্ক, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশ থেকে শত শত বিলিয়ন ডলার লুটপাট করেছে। যার একটি অংশ কানাডায় পাচার করা হয়েছে। টরেন্টোর কুখ্যাত ‘বেগমপাড়া’ এলাকায় সম্পদ কেনার ক্ষেত্রেও এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা (শেখ হাসিনার সহযোগীরা) আমাদের জনগণের টাকা চুরি করে বেগমপাড়ায় সম্পদ কিনেছে। আমরা এই অর্থ পুনরুদ্ধারে আপনাদের সাহায্য চাই। এটি আমাদের জনগণের অর্থ।
কানাডিয়ান হাইকমিশনার অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চুরি হওয়া অর্থ ফেরানোর চেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি আশ্বাস দেন, কানাডা এ বিষয়ে সহায়তা করবে। হাইকমিশনার বলেন, কানাডার সরকার চিহ্নিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফ্রিজ ও পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা চালু রেখেছে। অজিত সিং বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রম এবং গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রচেষ্টায় তার দেশ সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। ‘আপনারা যে মহৎ কাজটি করছেন, আমরা তা সমর্থন করি। ইতোমধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা আমরা প্রশংসা করি। আমরা জানতে চাই কীভাবে আরও সহযোগিতা করতে পারি।’ তিনি বলেন, কানাডা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী। শিগগির কানাডিয়ান একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা আরও বেশি কানাডিয়ান বিনিয়োগ চায়। বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। আমরা আপনার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং কানাডিয়ান কোম্পানিগুলোর কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর চাই। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি কানাডায় বসবাস ও লেখাপড়া করছেন। এজন্য কানাডা ঢাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ ভিসা অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নিতে পারে।