বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) আদলে বাংলাদেশে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলা হবে। মঙ্গলবার বিএনপির জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার (ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ) আলোকে জনগণকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. মোশাররফ রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার ২৬তম ধারায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা যেমন নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষাব্যবস্থাও পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও কমেনি। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাও সর্বজনীন জনবাস্তব হয়ে উঠেনি।

স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তাবনা তুলে ধরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. মোশাররফ বলেন, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশের কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ, পল্লি স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা হবে। সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্টার্ড মেডিকেল চিকিৎসকদের বিবেচনায় রেখে সব পরিকল্পনা-নির্দেশনা ও নীতিমালা তৈরি করা হয়। ফলে বিদ্যমান ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন ইউনানী, আয়ুর্বেদি, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্তিত্ব উপেক্ষিত হচ্ছে। প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অধিকতর উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও সহায়তা দেওয়া সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতকে কুক্ষিগত করা হয়েছে। ফলে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবনতি ও বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার ঘটেছে।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে খন্দকার মোশাররফ আহতদের পর্যাপ্ত ও দ্রুত চিকিৎসাসেবা দেওয়ার দাবি জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, বিগত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল-আমাদের স্বাস্থ্য খাত নষ্ট করে পাশের দেশে পাঠানো। চিকিৎসা বাবদ প্রতিবছর ১০ বিলিয়র ডলার পাশের দেশে চলে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।