ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবি
মারা যাওয়া ১২ জনের বাড়ি রাজৈর ও মুকসুদপুরে
পরিবারে শোকের মাতম * দালালদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার স্বরমঙ্গল গ্রামের মারা যাওয়া টিটু হাওলাদার ও মামা আব্দুল বাসারের পরিবারে শোকের মাতম -যুগান্তর
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১২ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর এবং গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
পুলিশ জানিয়েছে, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে একসঙ্গে রাজৈর উপজেলার ১০ এবং মুকসুদপুরে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
তারা হলেন রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আক্কাস আলী আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের নৃপেণ কীত্তনীয়ার ছেলে অমল কীত্তনীয়া, একই গ্রামের চিত্র সরদারের ছেলে অনুপ সরদার, শাখারপাড়র গ্রামের ফারুক মোল্লার ছেলে সজীব মোল্লা ও সাতবাড়িয়ার রাজীব। এদিকে মুকসুদপুর উপজেলার চরপ্রসন্নদী গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আশিক শেখ এবং একই গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সত্তার খন্দকারও রয়েছেন। সবার বয়স ২০-৩০ বছর।
স্বজনরা বলেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। তার সঙ্গে মামা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকনও যোগ দেন। ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে মারা যাওয়া সবাই একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাত্রা করেন। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান তারা। তাদের মধ্যে আবুল বাশার ও টিটু সম্পর্কে মামা-ভাগিনা।
আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে ২৮ লাখ নিয়েছে। কিন্তু আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।
টিটু হাওলদারের চাচাতো ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, দালালের কঠিন বিচার চাই। আর আমার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
সত্তার খন্দকারের ভাই আবুল খায়ের বলেন, ইতালি যাওয়ার জন্য অনেক ধার-দেনা করে দালাল শহিদ মোল্লাকে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার ভাই যে এভাবে মারা যাবে, ভাবিনি। আমি এই দালালের বিচার চাই।
মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।