মার্কিন সাহায্য বন্ধের প্রভাব
আইসিডিডিআরবি’র সহস্রাধিক কর্মী চাকরিচ্যুত
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
বিশ্বব্যাপী মার্কিন সাহায্য বন্ধের প্রভাব বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পেয়েছেন আইসিডিডিআরবি’র এক হাজারের বেশি কর্মী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সাহায্য স্থগিত থাকলেও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকায় বড় সমস্যা হবে না। রোহিঙ্গাদের সাহায্য অব্যাহত থাকবে বিধায় বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি’র মাধ্যমে বাংলাদেশে সাহায্য দিয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তার পরিমাণ ৮০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে ইউএসএআইডি সহায়তার বেশির ভাগ বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে করে থাকে। ফলে সরকার সরাসরি কোনো মার্কিন সহায়তা পায় না। আইসিডিডিআরবি’র প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করে বলে জানা গেছে। আইসিডিডিআরবি’র বার্ষিক বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ আসে ইউএসএআইডি থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের জেরে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে চাকরি করতেন। শুক্রবার সকালে আইসিডিডিআরবি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেন, যেসব প্রকল্প ইউএসএআইডি’র ফান্ডে চলত, সেগুলোর প্রায় সবই বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে সেসব প্রকল্পে কর্মরতদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইসিডিডিআরবি’র প্রায় ৫ হাজারের উপরে কর্মী। এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশকে (এক হাজারের বেশি) কর্মীকে টার্মিনেশন লেটার (চাকরিচ্যুতির চিঠি) দেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিভাগের যক্ষ্মাবিষয়ক কর্মসূচি থেকে। যক্ষ্মা কর্মসূচির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের জাতীয় যক্ষ্মানিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে কাজ করতেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সহায়তা সরকারের মাধ্যমে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী তথা সোশ্যাল মার্কেটিংয়ে সহায়তা বন্ধের কোনো প্রভাব পড়লে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। পল্লী বিদ্যুতায়নে কিছু সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে। এছাড়া, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার সচেতনতায় নাগরিক সমাজের বিভিন্ন উদ্যোগে মার্কিন সাহায্য সংস্থা অর্থায়ন করে থাকে। এটা বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য এককভাবে সহায়তা বন্ধ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী স্থগিত করেছে। ফলে এটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করবে এমন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খাদ্য সহায়তা ছাড়া সব প্রকার বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ ঘোষণা করেছেন। আমেরিকার জনগণের কাছে রিটার্ন না এলে চোখ বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো সহায়তা দেবে না।