Logo
Logo
×

শেষ পাতা

রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে জটিলতা

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ সরকারের

ফের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম শিক্ষার্থীদের

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ সরকারের

ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার মানোন্নয়নে রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হলেও সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। উলটো বেড়েছে সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, অনাকাঙ্ক্ষিত ফল বিপর্যয়সহ নানাবিধ সমস্যা। এতে কলেজগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়ে। এসব কারণে কলেজের শিক্ষার্থীরা গত আট বছরে শতাধিকবার রাস্তায় নেমেছেন। অবশেষে সোমবার কলেজগুলোকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কলেজগুলো নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে সরকার। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে।

এদিকে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম প্রত্যাহারের পর নতুন করে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক ও হামলাকারীদের আটকের দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকা কলেজে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আলটিমেটাম দেন তারা। একই সঙ্গে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে আগামী পনেরো দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ; এক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা; সব বর্ষের চলমান পরীক্ষা পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী চলমান রাখা; বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চলমান সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সংকট নিরসনে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি, সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও সংশ্ল্নিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আগামী দুই দিনের মধ্যে টেবিলটকের আয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ছয় দফা দাবির একটি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা মনে করছি যাদের কারণে আমাদের সহপাঠীরা আহত হয়েছেন তাদের বিচার না করে কোনো সমাধান সম্ভব নয়। দেশের কথা চিন্তা করে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সেজন্য পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম প্রত্যাহার করেছি। তবে যারা আঘাত করেছে তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম বহাল থাকবে। ২৪ ঘণ্টা পর আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানাব।’

এর আগে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম-নিউমার্কেট থানা ঘেরাও ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সাত কলেজের সামনে দিয়ে চলাচল নিষিদ্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মঈনুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন। মূলত অপরিকল্পিতভাবে কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই অধিভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এর মূল কারণ। এসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, আট বছর আগে একটি সরকার বিবেচনাহীনভাবে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে। যে কারণে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই সাত কলেজ নিয়ে নতুন একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময়ের প্রয়োজন। এটা আজ-কালের মধ্যে সম্ভব নয়। কারণ এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। এখানে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। তাই এটার কাঠামো ও মডেল কী হবে-সেটা নিয়ে কাজ চলছে। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে প্রথমে সংবিধি তৈরি করতে হয়। অনেক কিছু বিষয় রয়েছে। আইন ও অর্থের বিষয়ও রয়েছে। এছাড়া সনদের প্রয়োজন হয়। সেটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হয়ে থাকে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় হয়। আর একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে বহুদিন থাকবে। এখানে বহু বছরের শিক্ষার্থীদের স্বার্থের ব্যাপার রয়েছে। তাই তড়িঘড়ি করে অবিবেচনামূলক সিদ্ধান্ত নিলে হবে না। ভেবেচিন্তে সবকিছু করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সনদ পাওয়ার আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো সম্পূর্ণ বেআইনি। যেহেতু আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আর ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তির বিষয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজকে সভাপতি করে চার সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিতে মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে রাখা হয়। কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করছেন ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি সাত কলেজের অধ্যক্ষ, সিনিয়র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে যেটা মঙ্গলজনক হবে সেই সুপারিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হবে। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, আমরা দু-একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেব। সেখানে বিস্তারিত থাকবে।

উল্লেখ্য, বিপুলসংখ্যক কলেজ সামলাতে হিমশিম খাওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার কমানোর যুক্তি দিয়ে ২০১৭ সালে কলেজগুলোকে ঢাবির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া ও ফল প্রকাশ করে দীর্ঘ সেশনজট কমানো এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতি আনার কথা বলা হয়েছিল।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম