নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ডিসেম্বরকে সামনে রেখে নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি। এখন নির্বাচন কবে হবে এটা একটা ঐকমত্যের বিষয়। মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ে এ কথা বলেন তিনি। এদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে তারা। ইইউ এটাও মনে করছে, সংস্কারের জন্য সময়টা কম হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ঠাকুরগাঁও রোড মহাবিদ্যালয়ে বেলা ১১টায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উপলক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত যে উইন্ডো, সে উইন্ডোর প্রথম দিকটা ডিসেম্বরকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এই সংস্কার বিভিন্নভাবে চলছে, চলবে। তবে আমরা নিশ্চিত করব মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তারা যেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেন। আমরা নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করতে চাই, আমরা যদি পরিচ্ছন্ন স্বচ্ছ একটা পাত্র উপহার দিতে পারি, আমাদের এই পাত্রে যে পানি রাখা হোক সে পানিটা স্বচ্ছ রঙ ধারণ করবে। অতীতে বাস্তবতা আমরা জানি। সে বাস্তবতার নিরিখে সতর্ক আছি। আমরা বিশ্বাস করি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট থাকবেন।

নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. সানাউল্লাহ বলেন, সময়ের ব্যাপারটা নির্বাচন কমিশনের হাতে নয়। এটি সরকারের হাতে। আপনারা জানেন, একটি সংস্কার কার্যক্রম চলমান আছে। কয়েকটা সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের সুপারিশ পেশ করেছে। আমরা আমাদের প্রধান উপদেষ্টার ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যের মাধ্যমে একটি ধারণা পাই। তিনি বলেছেন, যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য এমন একটি জায়গায় দাঁড়ায় যে, তারা স্বল্পসংখ্যক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চান তাহলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ। আর যদি আরও সংস্কার করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা, পুলিশ সুপার শেখ জা?হিদুল ইসলাম, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজারসহ নতুন ভোটাররা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে ভোগনগর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সুপারভাইজার ও তথ্য সংগ্রহকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, কোনো কারণে কেউ যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না পড়ে। ভোটার হওয়ার জন্য নারীদের উৎসাহিত করতে হবে।

সিইসির সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ : আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। এরপর সিইসি সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ইইউ। তারা চান বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হোক। এজন্য আমাদের যত রকম সহায়তা দরকার তারা আমাদের দেবেন এবং আমাদের সঙ্গে থাকবেন। সেই সঙ্গে ইইউ সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে।

সিইসি বলেন, ইইউ নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথে সহায়তা করতে প্রস্তুত। কী ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হবে, তা ইইউর একটি প্রতিনিধিদল এসে যাচাই করবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসির স্বাধীনতা খর্ব হোক, এটা ইসি চায় না। সংবিধান ইসিকে যে স্বাধীনতা দিয়েছে, তা যেন অক্ষুণ্ন থাকে, বিষয়টি তিনি ইইউর প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন। তারাও জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন, ইসির স্বাধীনতা থাকবে।

পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিইসি বলেন, আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা অনুরোধ করলে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোট কবে হবে, সেটা নিয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রস্তুতির টাইমলাইন কী রকম হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা তাদের (ইইউ) আশ্বস্ত করেছি, কারণ আমরা অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। এতে তারা খুশি হয়েছেন।

এর আগে মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারে আমাদের সমর্থন রয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে সিইসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন আয়োজন করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে ইইউ। এদিন ইইউর আরেকটি দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।