Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ আর নেই

প্রধান উপদেষ্টার শোক

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেক্টর কমান্ডার কেএম সফিউল্লাহ আর নেই

মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও দেশের প্রথম সেনাপ্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ (বীর উত্তম) আর নেই। রোববার সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলেসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

রূপগঞ্জের কাজী আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম। দুপুরে প্রথম জানাজা ও রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিকালে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রাক্তন সেনাবাহিনী প্রধান, ঢাকা ও মিরপুর সেনানিবাসের তিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সব পদবির সদস্য উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তার লাশ বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।

কেএম সফিউল্লাহর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কেএম সফিউল্লাহ। তিনি ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পেয়েছেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার অবদান আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তার বীরত্বগাঁথা আজীবন চিরকৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবেন।’

কেএম সফিউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েডে জটিলতা, ফ্যাটি লিভার, ডিমেনশিয়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় তিনি আক্রান্ত ছিলেন। দীর্ঘদিন তার চলাফেরা ছিল স্ট্রেচারে। ২ জানুয়ারি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।

কেএম সফিউল্লাহ ১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলা) রূপগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৫৫ সানে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্তির পর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে, স্টাফে এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কোয়েটা থেকে পিএসসি লাভ করেন কেএম সফিউল্লাহ।

একাত্তরে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করে সফিউল্লাহ ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড ইন কমান্ড থাকাকালে ওই ব্যাটালিয়ন নিয়ে বিদ্রোহ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মেজর সফিউল্লাহ তার নামের প্রথম অক্ষর ‘এস’ দিয়ে ‘এস ফোর্স’ নামে একটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করেন এবং সে ব্রিগেডের কমান্ডার নিযুক্ত হন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি জীবন বাজি রেখে কখনো কখনো সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান ও সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে গ্যালেন্টি অ্যাওয়ার্ড বীর উত্তম পদকে ভূষিত করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার এপ্রিল ১৯৭২ সালে তাকে প্রথম সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করে। এই পদে তিনি ১৯৭৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন। জেনারেল সফিউল্লাহ ১৯৭৫ সালের পর থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ১৬ বছর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯২ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম