ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: রাজশাহী-৩
জনসংযোগে বিএনপির ৪ প্রার্থী জামায়াত-জাপাও মাঠে
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেই রাজশাহীতে লেগেছে সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। জেলার ছয়টি আসনেই তৎপর হয়ে উঠেছেন বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর রয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। আওয়ামী লীগসহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা মাঠে নেই। অন্য আসনগুলোর মতো রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেও নির্বাচন কেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
একসময় এ আসনটির একটি অংশ রাজশাহী সদরের (মহানগর) সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে সদর বাদ দিয়ে পবা এবং মোহনপুর উপজেলা নিয়ে আসনটি পুনর্গঠন করা হয়। রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে হওয়ার কারণে যে কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মেরাজ উদ্দিন মোল্লা (প্রয়াত)। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একই দলের আয়েন উদ্দিন সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ আসনটিতে বিএনপির চারজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান, মোহনপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ, সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির। এ আসনটিতে জামায়াত এখনো তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে কাজ করছেন কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন।
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে পবা ও মোহনপুরের এ আসনটিতে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন বিএনপির অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মিলন এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন।
ছাত্রদলের মাধ্যমেই মিলনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ছিলেন ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস। এরপর দীর্ঘ সময় রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সাংগঠনিক দক্ষতা ও নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতার কারণে তিনি মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি থেকে খুব দ্রুত মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। সর্বশেষ দলের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই তিনি পবা-মোহনপুরের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তৈরি করেছেন নিজের শক্ত অবস্থান।
পবার নওহাটা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, অ্যাডভোকেট মিলন কর্মীবান্ধব। দলমত নির্বিশেষে খুব সহজেই তিনি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন। এ কারণে সবাই তাদের সমস্যার কথা মিলনকে বলতে পারেন। আন্তরিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন তিনি। এ বিষয়টি মানুষ পছন্দ করেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনিই বিজয়ী হতেন। ভোট জালিয়াতি আর প্রহসনের মাধ্যমেই তাকে পরাজিত করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হাইকমান্ড মিলনকে আস্থায় রেখে দলীয় মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়ন পেলে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে পবা-মোহনপুরের দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বিশ্বাস করেন।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মনোনয়নের ব্যাপারে মিলন বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। পরিস্থিতি পাল্টেছে। আমরা আশা করছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এটিই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে কাজ করছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আশা করছি, এবারও দলের নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রায়হানুল আলমও দীর্ঘ সময় ধরে তার অনুসারীদের নিয়ে মাঠে রয়েছেন। দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। রায়হান বলেন, পবা আমার জন্মস্থান। এ আসনে ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। আশা করছি, দল সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এছাড়া এ আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুস সামাদ। তিনিও নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। তৎপর রয়েছেন সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির।
এ আসনটিতে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি জামায়াত। তবে দলটি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করছেন। দোয়া চাইছেন। নিয়মিত দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে তৎপর রয়েছে দলটি।
পবার হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক সংগঠন। দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের নেতারা অগ্রিম নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন না। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি আছে। আমাদের নেতাকর্মীরা সম্মিলিতভাবে সে কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। সঠিক সময়ে এ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। দলের নীতিনির্ধারণী মহল মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান এবং রাজশাহী মহানগর আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন এ আসনেও প্রার্থী হবেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। স্বপন বলেন, পবা-মোহনপুরসহ রাজশাহীর তিনটি আসনে আমি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।