ঢাকাই সিনেমার নায়িকার আঘাতে রক্তাক্ত প্রযোজক
এফ আই দীপু
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজ রিপা নামে ঢাকাই সিনেমার এক নায়িকার আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও লুব্রিকেন্ট (ইঞ্জিন অয়েল) ব্যবসায়ী আবুল বাশার।
১৪ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টের এ ঘটনায় আহত বাশারের মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় ১৮ জানুয়ারি গুলশান থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন বাশারের ভাই মো. আব্বাস।
এতে চিত্রনায়িকা শারমিন আফরোজ রিপা ওরফে রাজ রিপা, চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরী ও রাজ রিপার স্বামী শামীম আহমেদ শিশির ওরফে শিশির সরদারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে মো. আব্বাস বলেন, ‘১৪ জানুয়ারি রাতে প্রযোজক আবুল বাশার ও তার ভাগ্নে আবু রায়হান গুলশানের রাতের কাবাব রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যান। তখন চিত্রনায়িকা রাজ রিপা ও তার স্বামী শিশির সরদার এবং চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরীও সেখানে যান। ডিনার শেষে রাজ রিপা প্রযোজক আবুল বাশারের কাছে চাষী নামে তার সাবেক ড্রাইভারের বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে চান। আবুল বাশার এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেন না বললে রাজ রিপা ক্ষিপ্ত হয়ে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। আবুল বাশার তাতে বাধা দিলে রাজ রিপা মোবাইল দিয়ে একাধিকবার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করে।
একই সময় ইফতেখার চৌধুরীও কোল্ড ড্রিংকসের কাচের বোতল দিয়ে আবুল বাশারকে মাথায় আঘাত করে। অতর্কিত আক্রমণে আবুল বাশার মেঝেতে পড়ে গেলে শিশির সরদার তাকে কিল, ঘুসি, লাথি মারতে থাকে। এ সময় তারা আবুল বাশারের গলায় থাকা ২ ভরি স্বর্ণের চেনও ছিনিয়ে নেয়।’
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা ঢাকাই সিনেমার আরেক নায়িকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, আক্রমণ করে রাজ রিপা, ইফতেখার চৌধুরী ও শিশির সরদার চলে যাওয়ার পর আহত আবুল বাশারকে রেস্টুরেন্টের লোকজন গুলশানের সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজ রিপাকে ফোন করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। ইফতেখার চৌধুরীও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে মামলার বাদী মো. আব্বাস যুগান্তরকে বলেন, ‘আসামিরা আমার ভাইয়ের পূর্ব পরিচিত। তাই একসঙ্গে বসেই কথা বলছিলেন। কথা বলার একপর্যায়ে আমাদেরই এক পুরোনো ড্রাইভারের বিষয়ে তারা জানতে চান।
ওই ড্রাইভারের সঙ্গে হয়তো আসামিদের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু আমার ভাই পুরোনো ড্রাইভারের খোঁজ দিতে পারেননি। তিনি সেই ড্রাইভারের বর্তমান অবস্থানও জানেন না। তাই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছেন। তার মাথার আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, তাকে সিসিইউতেও (করোনারি কেয়ার ইউনিট) রাখতে হয়েছে। তার মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত। মাথার সেলাই কাটা হয়েছে। যেহেতু মাথায় আঘাত, তাই চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। আসামিরা আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, যা আমি মামলায় উল্লেখ করেছি।’
এদিকে মামলার অগ্রগতি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর হারুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়েও কাজ চলছে।’
কে এই রাজ রিপা ও ইফতেখার চৌধুরী : বর্তমান প্রজন্মের নায়িকা রাজ রিপা জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের সদস্য ছিলেন। খুলনা বিভাগে তিনি চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। তবে ব্যাডমিন্টনকে বিদায় জানিয়ে তিনি ২০২০ সালে রুপালি জগতে নাম লেখান। রায়হান রাফির ‘দহনে’ তিনি একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
এছাড়া ইফতেখার চৌধুরীর ‘মুক্তি’ সিনেমাতেও কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি কাজ করেছেন ‘ময়না’ ও ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ সিনেমাতেও। তবে তিনি অভিনয় নয়, বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছেন। প্রথম ২০২১ সালে রাজ রিপা কারাগারে আটক বিতর্কিত ও সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির পক্ষ নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন। তখন তিনি পরীমনির মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পরীমনি তাকে একটি স্বর্ণের আংটিও উপহার দেন। এরপর ২০২২ সালে সামাজিক মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেছিলেন, তাকে মেরে ফেলা হতে পারে। শুধু তাই নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় হত্যা বা মেরে আত্মহত্যা হিসাবেও চালিয়ে দিতে পারে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তবে কে বা কারা এ ঘটনার পেছনে রয়েছে সে বিষয়ে তখন তিনি মুখ খোলেননি।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে তারকাদের নিয়ে সেলেব্রিটি ক্রিকেট লীগে তিনি মারামারিতে অংশ নেন। তখন তিনি নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ ও অভিনেতা শরিফুল রাজের বিরুদ্ধে তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগ আনেন।
অন্যদিকে চিত্রপরিচালক ইফতেখার চৌধুরী অনন্ত জলিলের প্রথম সিনেমা ‘খোঁজ : দ্য সার্চ’ পরিচালনার মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় পা রাখেন। এরপর তিনি একাধিক সিনেমা নির্মাণ করেন। রাজ রিপাকে নিয়েও তিনি ‘মুক্তি’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। গত বছর সোশ্যাল মিডিয়ায় ইফতেখার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন রাজ রিপা। কিন্তু এখন তারা একসঙ্গেই বিভিন্ন আড্ডা ও পার্টিতে অংশ নেন।