Logo
Logo
×

শেষ পাতা

প্রকৃতির কাছাকাছি

খাগড়াছড়ির বনে দুর্লভ পাখি লালমাথা কুচকুচি

Icon

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খাগড়াছড়ির বনে দুর্লভ পাখি লালমাথা কুচকুচি

প্রায় তিন বছর প্রচেষ্টার পর খাগড়াছড়ির বনে ‘অতি দুর্লভ’ পাখি লাল মাথা কুচকুচির দেখা পেলাম। এ পাখিটি লাল মাথা ট্রোগান নামেও পরিচিত। পিটাছড়ার বনে মাঘের মধ্যদুপুরে এর দেখা মিলেছে। পাহাড়ে পাখি ও বন্যপ্রাণীর ছবি তোলার কারণে প্রায়ই জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই। তবে লাল মাথা কুচকুচির দেখা পাইনি। তবে এবার মিলেছে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে মাটিরাঙার পিটাছড়া বনে পেয়েছি পাখিটির দেখা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দুটোকেই একসঙ্গে দেখতে পেয়েছি।

অনেকটা সংশয় নিয়ে সকালে খাগড়াছড়ি থেকে পিটাছড়ার উদ্দেশে রওনা হলাম। মোটরসাইকেলে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় লাগে। পাহাড়ি পথ ধরে পিটাছড়া যখন পৌঁছাই, তখন প্রায় মধ্যদুপুর। পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল আমাদের স্বাগত জানালেন। মাঘের দিন হলেও শীতের অনুভব নেই। আলো ঝলমলে পিটাছড়ার বন। পিটা মেহগনি, কড়ই, জামসহ অসংখ্যা ছোট-বড় গাছ আর ঝোপে ভরা জঙ্গল। জঙ্গলে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল বহুল প্রত্যাশিত সেই লাল মাথা ট্রোগান। দ্রুত পাখির ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। প্রত্যাশিত পাখির দেখা পেয়ে কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়েই ছিলাম। বিস্ময়ের ঘোর কাটলে আবারো ছবি তুলতে লেগে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে এসে যোগ দিল আরও একটি ট্রোগান। একসঙ্গে পাশাপাশি দুটো ট্রোগানের দেখা পাওয়ায় অনেকটা ‘স্বপ্নের মতো’। কিছুক্ষণ পর পাখি দুটি পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের ঝিরির বনে নেমে যেতে লাগল। ঝিরির পাশের বনেও বেশ কয়েকবার দুটোকে একসঙ্গে দেখতে পেলাম। ক্যামেরার শাটারে যেন জঙ্গলের নীরবতা ভাঙছে। ভীষণ লাজুক পাখি ট্রোগান প্রায় ২০ মিনিট সময় দিল। এর মধ্যেই কয়েকশ ছবি তোলা হলো। ঘন জঙ্গলের কারণে ঠিকঠাক ছবি তোলা বেশ কষ্টকর।

পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক জোড়া লাল মাথা কুচকুচির দেখা মিলছে। সকাল ও বিকালে তাদের দেখা যাচ্ছে। তিন বছর আগে প্রথমবারের মতো ট্রোগানের দেখা মিলেছে। এরপর প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে ট্রোগান দেখা যায়। বর্ষায় ঘন জঙ্গলের কারণে দেখা যায় না। এখানে অন্তত দুই জোড়া ট্রোগান রয়েছে। পিটাছড়ার জঙ্গলে শিকার নিষিদ্ধ। ফলে এখানে পাখি ও বন্যপ্রাণীর বিচরণও বেশি। আমরা পাখি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পাশাপাশি নিবিড় প্রকৃতি নির্ভর পাহাড় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’

লাল মাথা কুচকুচি শান্ত ও লাজুক স্বভাবের পাখি। ঘন প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন ও মিশ্র বাঁশবনে বিচরণ করে। পাহাড়ি বনভূমিতেই এরা বাস করে। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাইরে লাল মাথা কুচকুচি দেখা যায় না। এপ্রিল থেকে জুলাই এদের প্রজননকাল। এ সময় ঘন বনে বৃক্ষের প্রাকৃতিক কোঠরে বা কাঠঠোকরার শূন্য গর্তে এরা বাসা বাঁধে। বাসায় ৩-৪টি ডিম পাড়ে। এদের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৯.২ সেন্টিমিটার । পুরুষ কুচকুচি দেখতে স্ত্রী কুচকুচির থেকে কিছুটা ভিন্ন। পুরুষ কুচকুচির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক সিঁদুরে লাল। পেটের দিকের বাকি অংশ উজ্জ্বল গোলাপি। বুকের লাল ও গোলাপির মাঝখানে একটি সাদা অর্ধবলয় থাকে। লেজ ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় পালকে গড়া। পিঠ থেকে লেজ হালকা দারুচিনি বা মরচে-বাদামি রঙের। ঠোঁটের কোণা, পা ও পায়ের পাতা বেগুনি। ঠোঁটের ওপরের পাটি বেগুনি-নীল ও নিচের পাটি কালো বর্ণের। স্ত্রী কুচকুচির সারা শরীর দারুচিনি রঙের। লাল মাথা কুচকুচি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুসারে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিঞা বলেন, ‘পাখিসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ খুবই সতর্ক। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি এলাকায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করেছি। তবে ট্রোগান বা লাল মাথা কুচকুচি যেহেতু খুবই দুর্লভ প্রাণী এটি সংরক্ষণে আমাদের বাড়তি মনোযোগ থাকবে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম