মেডিকেল ভর্তিতে কোটা
আন্দোলনের মুখে ১৯৩ জনের ফল স্থগিত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নির্বাচিত ১৯৩ জনের ফল স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সোমবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অধিদপ্তর। সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন বলেছেন, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেডিকেল ভর্তিতে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিদ্যমান থাকবে। তবে এটি শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তাদের নাতি-নাতনি বা অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য হবে না। আগামী ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। এর আগে রোববার ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে ৫,৩৭২ জন নির্বাচিত হয়, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটার ১৯৩ জন রয়েছেন। কম নম্বর পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন-এমন যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করছেন কেউ কেউ। প্রকাশিত ফলকে ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে রোববার রাতেই কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ দেখান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একদল শিক্ষার্থী। সোমবারও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বিক্ষোভ-মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে সোমবারের মধ্যে পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি জানান।
অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের (১৯৩ জন) ফল আপাতত স্থগিত থাকবে। আমরা তাদের কাগজপত্র যাচাই করব। সেজন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ২৭, ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি-এই তিন দিন তারা সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আসবে। সন্তান ছাড়া অন্য কেউ এই তালিকায় রয়েছে কি না তা আমরা দেখব। যদি থাকে তাহলে তার স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে এ প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, কোটা বাতিলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মূল পরিবর্তন হলো-নাতি-নাতনির পরিবর্তে সন্তানের কথা বলা হয়েছে। অতএব কোটার বিষয়টিতে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাও প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী হয়েছে। তারপরও এটা স্ক্রুটিনি (যাচাই) করা হবে। সায়েদুর বলেন, ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের মধ্যে ১৯৩ জনের মধ্যে খুবই আনইউজুয়াল হবে, যাদের (বাবার) বয়স ৬৭-৬৮ এবং যাদের সন্তান থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। সেখানে যদি কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে সেটা দেখা হবে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের খবর-
ঢাকা : বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা; আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; মেডিকেলে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই; ৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’সহ নানা স্লোগান দেন।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে প্রফেসর ডা. মেজর (অব) আব্দুল ওহাব বলেন, গতকাল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেয়েছে অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি, এটা কি বৈষম্য না? স্বৈরাচারের লোকেরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে আর তাদের কুকীর্তির প্রকাশ হলো গতকালের রেজাল্ট।
চট্টগ্রাম : দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মেডিকেলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে বক্তারা বলেন, ‘মসনদে’ বসে আপনারা যদি দায়িত্ব ঠিকঠাক মতো পালন করতে না পারেন, তাহলে ‘মসনদ’ ছেড়ে দিন। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন সংগঠক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সম্প্রতি প্রকাশিত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পুনর্বিবেচনা করে পুনরায় প্রকাশ এবং কোটাপ্রথা বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
কুমিল্লা : বিকালে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরী। এতে বক্তারা তিন দিনের মধ্যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পুনরায় বিপ্লবের ডাক দেবে বলে ঘোষণা দেন। এ সময় বক্তারা বলেন, শত শত শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকার সেই বিপ্লবকে ধারণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্য সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান, মুখ্য সংগঠক মোস্তফা জিহান, মুখপাত্র জাবেদ আহমেদ ভুঁইয়া, জাতীয় নাগরিক কমিটি কুমিল্লা সদরের অন্যতম সদস্য হাফসা জাহান প্রমুখ।
বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) : দুপুর দেড়টায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা গোলচত্বর প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, যে কোটার জন্য ২ হাজার ভাই-বোন রক্ত দিয়েছে সে কোটা আবার ফিরে এসেছে আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাত ধরেই। আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বলে দিতে চাই আপনি যদি মুক্তিযোদ্ধা কোটা বা অন্যান্য কোটা বহাল রাখতে চান তাহলে নিজের টাকায় মেডিকেল কলেজ বানিয়ে তাদের ভর্তি করান।