পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ৪ দিনের চীন সফরে বেইজিং যাচ্ছেন আজ। এই সফরের আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ঋণচুক্তি, তিস্তা প্রকল্প, বাণিজ্য বৈষম্য কমানোসহ বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের যেসব চুক্তির প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে, সেগুলো অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি বলেন, দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের অঙ্গীকার অপরিবর্তিত রয়েছে। চীন সবসময় বাংলাদেশের বন্ধু ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ সব আলোচনার পাশাপাশি কুনমিংয়ে ৩ থেকে ৪টি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য চীনের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন, যেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কথা বলছিলেন ইয়াও ওয়েন।

রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আগের মতোই সম্পর্ক থাকবে এবং ভবিষ্যতেও এই সম্পর্কে কোনো চিড় ধরবে না; বরং এই সম্পর্ক আরও গভীর হবে। এদিকে এ বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে ২০-২৪ জানুয়ারি চীনে তার প্রথম আসন্ন দ্বিপাক্ষিক সফরের বিষয়ে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময়, আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। সফরের গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে জানান, তার দেশের জনগণ চীনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

চীনের রাষ্ট্রদূত পুনর্ব্যক্ত করেন, চীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও উন্নয়ন উদ্যোগের জন্য তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ভালো বন্ধু ও প্রতিবেশীর চেতনায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে চীন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের মাতৃভূমিতে দ্রুত প্রত্যাবাসনে তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা চীনে বাংলাদেশি পণ্যের একশ’ ভাগ শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাজার সুবিধার প্রশংসা করে আশা প্রকাশ করেন, এই বাজার সুবিধা যেন ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

উপদেষ্টা বাংলাদেশ রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগের আওতায় যাত্রীদের জন্য আরও রেলওয়ে কোচ যুক্ত করার জন্য চীনের সহায়তা কামনা করেন। স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে পূর্বাচলে একটি পূর্ণাঙ্গ তৃতীয় স্তরের চীনা হাসপাতাল তৈরির আহ্বান জানান এবং কুনমিংয়ে ৩ থেকে ৪টি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল মনোনীত করার জন্য অনুরোধ করেন যেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা উন্নত চিকিৎসা নিতে পারে।

রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে আরও জানান, আসন্ন সফরের সময় চীনা পক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত যা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছিল। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, আহত শিক্ষার্থীরা দ্রুত চীনে তাদের চিকিৎসা পাবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আসন্ন চীন সফর দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে এই আশা ব্যক্ত করেন।