Logo
Logo
×

শেষ পাতা

গভর্নরের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক

শিল্প বাঁচাতে ঋণের সুদহার কমান

মূল্যস্ফীতি কমলে ঋণের সুদহার কমানো হবে * খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক মানের সংজ্ঞার বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে * বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল রয়েছে এবং আগামী দিনেও থাকবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিল্প বাঁচাতে ঋণের সুদহার কমান

দেশের শিল্প খাতকে বাঁচাতে হলে ঋণের সুদহার কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক মানের সংজ্ঞা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব প্রস্তাব দেয়।

বৈঠকে গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণের আন্তর্জাতিক মানের সংজ্ঞা আইএমএফ-এর শর্তের কারণে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। তবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে তিনি ওই সংজ্ঞা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তখন ঋণের সুদের হারও ধীরে ধীরে কমানো হবে। বাজারে ডলারের কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে বলেন, ডলারের প্রবাহ বাড়ার ফলে আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা হয়েছে। রোজানির্ভর পণ্য কোনো মার্জিন ছাড়াই আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের এখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

ডিসিসিআই-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদের নেতৃত্বে চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহসভাপতি মো. সালিম সোলায়মান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় গভর্নরের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বেড়ে গেছে। এতে পণ্যের দামও বাড়ছে। ফলে বিক্রি কমে গেছে। এর মধ্যে আবার ঋণের সুদহার আরও বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। সুদের হার নতুন করে আর না বাড়িয়ে চলমান সুদের হার কমানোর দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। সুদের হার না কমলে বাড়তি খরচ দিয়ে শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না।

ঋণের সুদহার কমানোর প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমানোর জন্য ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরে কমেছে। আগামী দিনে আরও কমবে বলে আশাবাদী তিনি। জুনের মধ্যে এ হার কমে এলে তখন ঋণের সুদহার আবার কমনো শুরু হবে। কারণ, মূল্যস্ফীতির হার না কমলে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির হার কমানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ঋণের সুদহার আগে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ছিল। এখন তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশে উঠেছে। এ হার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈঠকে ব্যবসায়ীরা জানান, এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সমস্যা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে চাচ্ছে না। এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যার হওয়ার কথা নয়। তারপরও কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে কিছু সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে বাজারে ডলারের কোনো সংকট নেই। ডলারের দাম বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী দিনেও স্থিতিশীল থাকবে। ডলারের দামের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বাজারই ডলারের মূল্য নির্ধারণ করবে। ডলারের আমদানি ও চাহিদার ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হবে।

দেশের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে মন্তব্য করে তাসকীন আহমেদ বলেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার ব্যবসার খরচ ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার ওপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করার অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতির বিদ্যমান চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংক ঋণের শ্রেণীকরণের সময়সীমা তিন থেকে ছয় মাস আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া দেশের বাইরে ব্যবসায়িক কার্যালয় স্থাপনের বিদ্যমান কঠোর নীতিমালা কিছুটা হলেও শিথিল করা দরকার। এতে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়া দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজানে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের মার্জিন ছাড়াই ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে এলসি খোলার হার বেড়েছে। এতে রোজায় পণ্য আমদানি বাড়বে। ফলে রোজায় পণ্যের সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম