বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ফ্যাসিবাদ রুখব: হাসনাত আবদুল্লাহ
কুমিল্লা ব্যুরো ও দেবিদ্বার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ভোটের জন্য যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা জাতির সঙ্গে বেইমানি করছেন। দেশে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে হলে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে করতে হবে।
আগে আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করেছিল, ফিরে এসে আওয়ামী লীগ তাদের হত্যা করেছিল। মনে রাখবেন, এ বাংলাদেশে হয় ফ্যাসিবাদ থাকবে, না হয় আমরা থাকব। বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ফ্যাসিবাদকে আমরা মোকাবিলা করব। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার পৌর মিলনায়তনে আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আরও বলেন, গণহত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের কাছে একটি ঘৃণ্য চক্রে পরিণত হয়েছে। তারা আলেম-ওলামাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। আলেম সমাজ ছিল তাদের সবচেয়ে অপছন্দের। তিনি বলেন, যারা ভোটের রাজনীতির জন্য আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করতে চাচ্ছেন, তারা কি ভুলে গেছেন ১৬ বছর আওয়ামী লীগ আপনাদের ওপর কি পরিমাণ নির্যাতন করেছে। কি পরিমাণ মামলা-হামলা-জুলুম করেছে। আপনারা ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়ে জাতির কাছে বিতর্কিত হয়েন না।
হাসনাত বলেন, অতীতে যারাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ তাদেরই হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন না করে ১৬ বছর তারা যে গুম খুন অত্যাচার নির্যাতন করেছে সে বিষয়ে বিচারের আওয়াজ তুলুন। আপনারা যদি ফ্যাসিস্টদের বিচারের দাবি তোলেন আমরা আবারও আপনাদের পক্ষে রাজপথে নামব। বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ফ্যাসিবাদকে আমরা মোকাবিলা করব। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেটা হবে ইতিবাচক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে সবার ন্যায্য হিস্যা বাস্তবায়ন করা হবে। যেখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। একটা সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়তে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলি।
হাসনাত বলেন, ১৫ বছর ছিল আওয়ামী জাহিলিয়াতের শাসন। তাদের শাসনামলে মানুষের অধিকার ছিল না। শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ভোটের আমানত সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। আমাদের দেশে ১০০ টাকা হলে ভোট কেনা যায়। এমন একটা সমাজ বিনির্মাণ করতে হবে যাতে আমরা অর্থের কাছে বিক্রি না হই। আমাদের বিবেক যেন অর্থের কাছে বিক্রি না হয়। আমরা যদি টাকার কাছে বিক্রি হই তাহলে অসৎ নেতৃত্ব আমাদের মাথায় চড়ে বসবে।
হাসনাত বলেন, এ দেশে ভারতীয় এজেন্ডা রয়েছে। বিদেশি এজেন্ডা রয়েছে। একটি মহল এ দেশে সংখ্যালঘু কার্ড খেলতে চায়। এটা করতে দেওয়া যাবে না। সংখ্যালঘুরা যাতে তাদের নিজ নিজ ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারেন সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ আমলে দেশটাকে একটা ধর্মবিমুখ রাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছিল। এটা একটা পশ্চিমা এজেন্ডা।
দেশটাকে ধর্মহীন করা যাবে না। যারাই দেশটাকে ধর্মহীন করার চেষ্টা করেছে তারাই দেশান্তরী হয়েছে। সব ধর্মের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংখ্যালঘুরা যাতে দেশে নিরাপদে থাকেন সবাইকে সেই প্রচেষ্টা করতে হবে। ধর্ম পালনে সবাইকে স্বাধীনতা দিতে হবে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
হাসনাত বলেন, শিক্ষকরা যেন সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করতে হলে শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে হবে। সবার একান্ত প্রচেষ্টায় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন-দেবিদ্বার কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মুফতি আশরাফুল আলম উবাইদী, উপজেলা জামে মসজিদের খতিব সালেহ আহম্মাদ মুনিরী, ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন সরকার, সুলতানপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কবির আহম্মেদ, হাইস্কুল জামে মসজিদের খতিব আওলাদ হোসাইন মুরাদী, ভৈষেরকুট দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল হক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দেবিদ্বার প্রতিনিধি মুক্তাদির যারিফ সিক্ত প্রমুখ।