স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি
পাহাড়ি ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ

যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে সচিবালয়ের উদ্দেশে যাওয়া পাহাড়ি ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিছিলটি হাইকোর্ট এলাকায় এলে লাঠিচার্জের পাশাপাশি পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে।
এতে অন্তত সাতজন আহত হন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বুধবার এনসিটিবি ভবনের সামনে বিক্ষোভে হামলার প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি ছাত্র-জনতা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করতে যায়।
এদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সমাবেশে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তদন্তের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ২৭ বিশিষ্ট নাগরিক। পৃথক বার্তায় এ প্রতিবাদ জানান তারা। পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রদল।
রাজধানীর মতিঝিলে বুধবার পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ছাত্র-জনতা ব্যারিকেড ভেঙে অতিক্রম করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
পরে জলকামান দিয়ে পানি ছিটানোর পাশাপাশি লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডও নিক্ষেপ করা হয়। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেখানে কয়েক মিনিট ধরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষোভকারীরা দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে সরে যায়।
বিক্ষোভকারীদের একজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী ও ইডেন কলেজের ছাত্রী জয়মা মুনমুন বলেন, বুধবারের হামলার প্রতিবাদে এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন তারা আমাদের ওপর দফায় দফায় লাঠিপেটা করেছে। জলকামান ব্যবহার করেছে, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। হামলায় ছয় থেকে সাতজন আহত হয়েছেন।
আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এই হামলার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল করব। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দাবির সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা শুধু তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। আমরা তাদের সবাইকে একসঙ্গে সচিবালয়ে না গিয়ে বরং কয়েকজনের একটি প্রতিনিধিদলকে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সে পরামর্শ শোনেননি। পরে আমরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিই।
আহতরা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভান তাহসিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহিদুল ইসলাম রিয়াদ ও নেবলা তাসফিয়া তাবাসুম, নর্দান ইউনিভার্সিটির মারুক হাসান, ঢাকা কলেজের তৈয়ব ইসলাম ও পঙ্কজ নাথ সূর্য একং পথচারী বাবুল।
হামলার নিন্দা অন্তর্বর্তী সরকারের : হামলার নিন্দা ও তদন্তের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ : বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বামপন্থি শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিকাল পৌনে ৫টায় ঢাবি ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস এলাকা থেকে মিছিল বের করে ভিসি চত্বর ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিলন চত্বরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সাংবাদিকতা বিভাগের ৩ শিক্ষার্থীর ওপর হামলায় বিক্ষোভ : এনসিটিবির সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তিনজন শিক্ষার্থী, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
এদিকে মতিঝিল থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, মতিঝিলে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে হামলার ছবি ও ফুটেজ দেখে দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তারা হামলার কথা স্বীকার করেছে। আটকরা হলো-আরিফ আল খাবির ও আব্বাস।
হামলার প্রতিবাদে ২৭ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি : বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে ২৭ বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, আদিবাসী ছাত্র-জনতার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো আইনি পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রামেন্দু মজুমদার, সারওয়ার আলী, রাশেদা কে চৌধুরী, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রানা দাশগুপ্ত, ফওজিয়া মোসলেম, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, এসএমএ সবুর, খুশী কবির, এমএম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, জোবায়দা নাসরিন, পারভেজ হাসেম, কাজল দেবনাথ, আবদুল ওয়াহেদ, সালেহ আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, জীবনানন্দ জয়ন্ত, এ কে আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, অলক দাস গুপ্ত, জহিরুল ইসলাম জহির, দীপায়ন খীসা, রেজাউল কবির ও গৌতম শীল।
বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বিক্ষোভ সমাবেশ : সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানান, ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ঘেরাও কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছেন পাহাড়িরা। বৃহস্পতিবার বান্দরবান জেলা শহরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকারকর্মী লেলুং খুমী, বান্দরবান দুর্নীতি দমন কমিশনের সভাপতি অংচমং মারমা, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইংউ নিনি প্রমুখ।
খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ থেকে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তূষিতা চাকমা। রাঙামাটি শহরে বৃহস্পতিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ রাঙামাটি।
রাঙামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুজন চাকমার সভাপতিত্বে ও ক্যাচিংনু মারমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক সমিত্র চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমা, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের উসাই মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যাকল্যাণ ছাত্র সংগঠনের নেতা সবুজ তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।