এইচএমপিভিতে দেশে প্রথম মৃত্যু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশে প্রথমবার হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ বছর বয়সি সানজিদা আক্তারের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডা. আরিফুল বাশার বলেন, ওই নারী বুধবার রাতে মারা গেছেন। দেশে এইচএমপিভি শনাক্ত হওয়া কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য এটিই প্রথম। তবে তিনি যে এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্যই মারা গেছেন, এমনটি বলা যাবে না। ওনার অন্য আরও শারীরিক জটিলতা ছিল, যার জন্য হঠাৎ করেই তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ওই রোগী ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া তার কিডনি সমস্যা ছিল, সেই সঙ্গে তিনি অনেক স্থূল (মোটা) ছিলেন, যে কারণে তাকে ভেন্টিলেটরে তোলা যাচ্ছিল না। ভাইরাল নিউমোনিয়ার জন্যও তিনি সম্ভবত মারা যাননি, অনেকটা সুস্থও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী জটিলতার জন্য হয়তো সমস্যা হয়েছে।
ডেথ রিভিউয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বজনরা ইতোমধ্যে লাশ নিয়ে গেছেন। তারপরও এটা নিয়ে অধিদপ্তর অথবা মন্ত্রণালয় ব্রিফ করবে। সেই আলোকে আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা করব।
১২ জানুয়ারি সানজিদা আক্তারের এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। জানা যাচ্ছিল ওই নারীর বিদেশ সফরের কোনো ইতিহাস ছিল না। তখন জানা যায়, ওই নারীর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়। ১২ জানুয়ারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছিলেন, ওই নারী এইচএমপিভিতে আক্রান্তের পাশাপাশি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন তখন জানিয়েছিলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসটিতে প্রতিবছরই দু-চারজন আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় দেশে। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এটি শুধু চীনেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এ ভাইরাসের উপস্থিতি আরও আগে থেকেই আমরা পেয়েছি। কাজেই এটা নতুন কোনো ভাইরাস নয়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে এইচএমপিভির চিকিৎসার জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি নেই এবং এইচএমপিভি প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নেই। তাই রোগের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। এ ভাইরাস নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলা হলেও পার্শ্ববর্তী একাধিক দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্কতাও জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এইচএমপিভি করোনার মতো মরণঘাতী নয় : এদিকে এইচএমপিভি নিয়ে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম বলেন, এইচএমপিভি করোনাভাইরাসের মতো মরণঘাতী নয়। সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তারা বেশি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ-এর ভাইরোলজি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে। বিমানবন্দরে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস চালু করা দরকার। বিশেষ করে জনসমাগমে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ভাইরাসটি নিয়ে দেশের সবাই ভয় পাচ্ছেন। অনেকে মনে করছেন, কোভিড চলে এসেছে কি না! এ ভাইরাস আগে থেকেই আমাদের এখানে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। তবে এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম।
সেমিনারে অন্য আলোচকরা বলেন, এইচএমপিভিতে আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। পুরোনো এ ভাইরাসে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বরং দরকার ব্যক্তিপর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।