Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ইআরএফের সেমিনারে বিডা চেয়ারম্যান

বেসরকারিতে ছাড়ার চিন্তা সরকারি বন্ধ কোম্পানি

দেশে ব্যবসায়ী মানেই যেন অপরাধী-একে আজাদ * ‘সিস্টেম লসের নামে চুরি বন্ধ হলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারিতে ছাড়ার চিন্তা সরকারি বন্ধ কোম্পানি

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ শিল্প কারখানাগুলো বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছি। এসব প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সাপোর্ট রয়েছে। সে অনুযায়ী এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। 

একই অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, দেশে ব্যবসায়ী মানেই যেন অপরাধী। সবাই শুষে খেতে চায়। অনিয়মে অন্তত ৪০ শতাংশের মতো ব্যয় করতে হচ্ছে। তার মতে, সব সরকারের চরিত্রই এক। ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। এতে আরও বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা গ্যাস বিদ্যুতের সমস্যাসহ বিনিয়োগের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। বিডার পক্ষ থেকে আগামী ৭-১০ এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ইকোনমিক জোনগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। 

বিডা চেয়ারম্যান জানান, দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো ধীরে ধীরে মোকাবিলা করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হিটম্যাপ নামে একটা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে ২০টি প্রতিষ্ঠানের মতামত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যাটের বিষয়টি নিয়ে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। 

গ্যাস পরিস্থিতির বিষয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকা উচিত। মালেশিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, দেশটিতে উৎপাদিত গ্যাসের ৭০ শতাংশই শিল্পে ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে গ্যাসের বরাদ্দ শিল্প মন্ত্রণালয়ই করে থাকে। শিল্পে গ্যাস সরবরাহ সংকট নিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আপাতত রাষ্ট্রায়ত্ত বন্ধ শিল্পকারখানাগুলো বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেওয়া যায় কি না, তা চিন্তা করছি। কারণ এখানে ইতোমধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ সুবিধা রয়েছে। ফলে কারখানাগুলো দ্রুত উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব।

একে আজাদ আরও বলেন, গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে ১০ শতাংশ চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দর বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই পারে এ চুরি বন্ধ করতে। কারণ, তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। নতুন করে গ্যাসের দর বৃদ্ধি ও ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার যে নীতি নিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমরা কোথায় যাব? গ্যাসের দর এবং ভ্যাট বাড়ানোর আগে অর্থনীতি এবং জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়বে তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। 

একে আজাদ বলেন, পণ্য আমদানি, রপ্তানি এবং মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে। এই চিত্র বলছে বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে গ্যাস এবং ভ্যাট বাড়ানোর প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা চিন্তা করা উচিত। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী মানেই যেন অপরাধী। সবাই শুষে খেতে চায়। অনিয়মে অন্তত ৪০ শতাংশের মতো ব্যয় করতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আসলে সব-সরকারের চরিত্রই এক। গত সরকার বলেছিল গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। 

গ্যাস ও ভ্যাট সঙ্গে আবুল কাশেম খান বলেন, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এসআরও জারি করে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, নীতি গ্রহণে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয় না। তার মতে, দুর্নীতির কারণে সব খাত নষ্ট হয়ে গেছে। 

লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের সিইও মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, নতুন বিনিয়োগ আনতে দেশের বাইরে গিয়ে রোড শো করা হয়েছে। অথচ দেশের বিদ্যমান বিনিয়োগের পরিস্থিতি বুঝার প্রয়োজন ছিল। তাদের চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করার দরকার ছিল। বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই। অথচ এই বিনিয়োগকারীরাই বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশের পক্ষে কাজ করবে। তিনি বলেন, নীতি ঠিক নেই, আইন শৃঙ্খলা ঠিক নেই, নতুন একটা উদ্যোগ নিতে গেলে ২৩ থেকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের মতো কাজগুলো করা সময়সাপেক্ষ। এসব অসুবিধা দূর করতে হবে। 

এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে দস্যুরা নিয়ে যায়। দোকান দিলে চাঁদাবাজরা নিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের পথ সুগম করতে ট্যাক্স হ্যাভেন না হলেও একটু সুবিধা দিতে হবে। যাতে ব্যবসা করতে গিয়ে কিছু পুঁজি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিডার হেড অব বিজনেস ডেভলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম