Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বিএনপির সমমনাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু

নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন নেতারা, জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টায় * জোটগতভাবে হলে ঢাকায় তিনটি আসন চাইবে

নূরে আলম জিকু

নূরে আলম জিকু

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির সমমনাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পরে-এমন বার্তা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে নির্বাচনি দলগুলোর শীর্ষ নেতারা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। ভোটারের আস্থা অর্জনে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। একই সঙ্গে দলের তারকা নেতারা নতুন চমক সৃষ্টির জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

সমমনা অন্তত দশটি দলের শীর্ষ নেতা প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, বিএনপি জোটগতভাবে ভোট করবে কিনা-তা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাদের জানিয়েছেন। তবে এখন এলাকাভিত্তিক তারা কাজ করছেন। পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দাবিতেও রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নেতাদের মতে, জোটগতভাবে হলে ঢাকায় অন্তত তিনটি আসন তারা চাইবেন। তারা আশা করছেন-শিগগিরই নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ জানা যাবে।

চলতি বছরের শেষদিকে কিংবা আগামী বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে-অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো এ মুহূর্তে অনেকটাই নির্বাচনমুখী। তবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় দলগুলোর শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে-এমন আশা করেই মাঠে নেমেছেন তারা। পাড়া-মহল্লায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন অনেকেই। যদিও এসব নেতার কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় বাধার কথাও বলেছেন। সেক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্র থেকে প্রতিটি জেলায় সমমনা দলগুলোর শীর্ষনেতাদের সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির সমমনা দলগুলোর যেসব নেতা নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-বগুড়া-২ আসনে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮ ও বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ভোলা সদর আসনসহ ঢাকার একটি আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ঢাকার একটি আসন থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ফেনী-৩ আসন থেকে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, জামালপুর- ৫ আসনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও ঝিনাইদাহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এদিকে গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছিলেন, তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আর অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে নিজের বদলে তার বড় ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুককে নামাচ্ছেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ) এলাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওমর ফারুক। এছাড়া এলডিপির চট্টগ্রাম-৭ আসনে নুরুল আলম, ময়মনসিংহ-৮ আসনে ড. আওরঙ্গজেব বেলাল, ময়মনসিংহ-১০ আসনে সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ এবং গোপালগঞ্জ-১ আসনে সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক। এদিকে গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ঢাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ কয়েকটি সমমনা দলের শীর্ষ নেতা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

দলগুলোর নেতারা জানান, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আর সেজন্য দরকার প্রকৃত অর্থেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। সেজন্যই জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা কর্মসূচি নিয়ে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন তারা। সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নানারকমের ইতিবাচক সাংগঠনিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিচ্ছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা নিয়েও কাজ করছেন বলে জানা যায়।

আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের এখনো সময় নির্ধারণ হয়নি। তবে আমাদের প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে। এলাকাকেন্দ্রিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে।’

সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘দলগতভাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আমরা এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। আমাদের দল নিবন্ধিত। ২০১৮ সালে আমরা নির্বাচন করেছিলাম। এবারও আমাদের রাজনৈতিক একটা প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনি এলাকাকেন্দ্রিক কিছু রাজনৈতিক কাজ, সাংগঠনিক কাজ, সংগঠনের কাজ শুরু করেছি। নিয়মিতই সম্ভাব্য এই দুটি নির্বাচনি এলাকায় জনগণের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রক্ষা করছেন তিনি। নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সাইফুল হক আরও বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির সঙ্গে আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম, সেখানে অননাষ্ঠুনিক কিছু কথাবার্তা আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথাবার্তা হয়নি।’

২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। আগামীর নির্বাচনেও একই আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ২০১৮ সালে জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। স্বৈরাচার সরকার রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে নিয়েছে। তবে জনগণ আমাকে সব সময় সমর্থন জানিয়ে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় লক্ষ্মীপুর-১ আসনে নির্বাচন করার সব ধরনের প্রস্তুতি আমার রয়েছে। নিয়মিতই এলাকায় গণসংযোগসহ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছি।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে। আগামীতে এই আসন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। নিয়মিতই এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত আছি।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জের নিকলী-বাজিতপুর এলাকায় নিয়মিতই গণসংযোগসহ সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ জনমত গড়ে তোলায় কাজ করছি। এলাকায় সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা ও সবার আগে বাংলাদেশ এই স্লোগানে নিকলী ও বাজিতপুরে কাজ করছি। ৩১ দফা জনগণকে বোঝাচ্ছি। জনআকাক্সক্ষার যে, বাংলাদেশে এখানে ৩১ দফার মাধ্যমে সত্যিকারে মুক্তি মেলবে। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে।

ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসাবে এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণসংযোগ করছি। মানুষ দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। জনগণ ভোট দিতে চায়। আমাদের জোটের অনেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। নির্বাচনি বিষয়ে বিএনপি কোনো সিদ্ধান্ত জানালে আমরা অবশ্যই তা মেনে নেব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম