গণ-অভ্যুত্থানের পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তৎপর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর দলটির হাইকমান্ড। পটপরিবর্তনে নানা ষড়যন্ত্র হলেও তা রাজনৈতিকভাবে দমন করেছেন নেতারা। নতুন করে যাতে কোনো ‘চক্র’ দেশবিরোধী চক্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক অবস্থায় মাঠে থাকবে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা। অপ্রত্যাশিত যে কোনো ঘটনা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে চান তারা। নেতারা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা এখনো সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বহাল। তারা বিভিন্ন সময়ে নানা ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করে আসছে। এছাড়া নতুন করে দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত চলছে। এসব রুখে দিতে বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলো সর্বদা তৎপর। কোনো সংগঠন বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যাতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখবে নেতারা। এজন্য যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মৎসজীবী দল, কৃষক দল ও ছাত্রদলসহ সবকটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তৎপর থাকবে দলটির ‘সাইবার টিম’। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় লড়াইয়ের পর দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তবে এখনো তাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিএনপি এসব বিষয়ে সতর্ক। চক্রান্ত ও অপপ্রচার রুখতে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনগুলোও মাঠে থাকবে।

তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর নানা চক্রান্ত শুরু হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীরা খুবই সচেতন এবং সতর্ক। তবে দু-একটি জায়গায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলেও তাৎক্ষণিকভাবেই সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো সংগঠন কিংবা গোষ্ঠী যাতে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কোনো ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য নেতাকর্মীদের সব সময় সতর্ক থাকার বার্তা দিয়ে আসছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দেওয়া বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে উদ্দেশ করে তারা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব বিতর্কিত বক্তব্য পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারাই ভাইরাল করেন। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হন। বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্যই একটা গোষ্ঠী লাগাতারভাবে ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা পতিত ফ্যাসিবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কয়েকটি ছাত্র সংগঠনকেও এসব অপতৎপরতায় যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যার ফলে ছাত্র সংগঠনগুলোর অনেকের মধ্যে বিভেদ দেখা যাচ্ছে এবং তারা একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছে।

নেতারা আরও বলেন, বিএনপি সব সময়ই ঐক্যের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। গণ-অভ্যুত্থানের আগে-পরে বারবার ঐক্যের রাজনীতির কথা বলে আসছেন দলের হাইকমান্ড। তবে ষড়যন্ত্রকারীরা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিতে মরিয়া। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আগামী দিনে এসব ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

এছাড়া বিএনপি নেতাদের অভিযোগ-কয়েকটি দলের ছাত্র সংগঠন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এসব অপপ্রচার রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্ক থাকবে বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দল। এখানে ষড়যন্ত্রকারীরা চক্রান্ত করে সফল হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে সতর্ক আছেন। তিনি সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। দলের শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন। আগামী দিনেও তার নির্দেশে সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করা হবে। এখন যেসব ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার দেখা যাচ্ছে তা বিএনপি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করবে। আমরা সব সময়ই যে কোনো চক্রান্ত ও অপপ্রচার রুখতে মাঠে আছি, থাকব।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান যুগান্তরকে বলেন, গত ১৭ বছর রাজপথে আমরা ছাড়া কেউ ছিল না। সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই আমরা টিকে আছি, এখনো টিকে থাকব। এখন যা ঘটছে তা কিছু ব্যক্তি কিংবা কিছু গোষ্ঠীর অপরিপক্বতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব যুগান্তরকে বলেন, নতুন করে ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি। শনিবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের ঘটনাটিও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হচ্ছে। তাদের (কয়েকটি ছাত্র সংগঠন) কর্মকাণ্ডে আমাদের মনে হচ্ছে অনেকেই নানাবিধ ষড়যন্ত্রে র্লিপ্ত। আমরা প্রস্তুত আছি। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ছাত্রদল যেভাবে সতর্ক থেকে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছে, আগামী দিনে আরও সতর্ক থাকবে। কোথাও দেশবিরোধী কোনো অপতৎপরতা দেখা দিলে তা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত।