বড় কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে উৎসাহিত করা হবে: অর্থ উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লে বাজারের ভিত্তি বড় হবে না। তাই শুধু রাষ্ট্রায়ত্ব নয়, বিদেশি ও পারিবারিকভাবে পরিচালিত বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহিত করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একথা বলেন। পুঁজিবাজারের সংকট কাটাতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে এই আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভিন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে উৎসাহের পাশাপাশি প্রণোদনা দেওয়ার অনুরোধ জানান।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভালো কোম্পানির সংখ্যা না বাড়লে কীভাবে বাজারের ভিত্তি বড় হবে। বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবেন। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, শুধু রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নয়। বেসরকারি খাতে যেসব ভালো কোম্পানি আছে, তাদের পুঁজিবাজারে আসতে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। এর উদ্দেশ্য হলো বাজারের ভিত্তি মজবুত করা। তার মতে, ভালো শেয়ার এলে লোকজনের অংশগ্রহণ বাড়ে। তাই রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকেও আনার চেষ্টা করা হবে। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন শুধু সংস্কার হচ্ছে। আমরা নতুন কোনো নীতিমালা করছি না। কাউকে ফেভার (আনুকূল্য প্রদর্শন) করা হচ্ছে না। অতীতে ফেভার করা হয়েছে। অতীতে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়িয়ে দিতে পলিসি করা হয়েছিল। কার শেয়ার কে বাড়াবে তা নিয়ে কাজ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির মাধ্যমে তারল্যসহ নানা ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার ব্রোকারেজ হাউজ, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজারসংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসেছিলাম। তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা শুনেছি। আমার আস্থা আছে বাজার ভালো হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানো ও খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। পৃথিবীর সব দেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পুঁজিবাজার থেকে হয়। ব্যাংক থেকে পুঁজি আসে স্বল্পমেয়াদি। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যাংক থেকেই পুরো টাকা নেবেন তা হয় না। নিজেদের পুঁজি অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ থাকা উচিত। পুরোটা ঋণ নির্ভর হলে কেমনে হয়।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসইতে এখনো অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাদের বিরুদ্ধে কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তাদের রেখে আস্থা ফেরানো কীভাবে সম্ভব-প্রশ্নে সালেহউদ্দিন বলেন, দু-একজনের জন্য আমাদের পলিসি বা অ্যাকশন (পদক্ষেপ) নিতে সমস্যা হবে না। তারা বাধা দিলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমরা বাজেটে শুল্কসহ বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার কথা বলেছি। তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) সুবিধা না দিলে তারা আসবে না। আমরা প্রত্যাশা করছি আগামী বাজেটে এ রকম কিছু থাকবে।
দীর্ঘমেয়াদি পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নয়নে অক্টোবরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। ওই বৈঠকের পর পুঁজিবাজারে মূলধনী আয়ের ওপর করহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আসে। বাজারের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিকল্পনার বিষয়টি খোলাসা করেননি। ওই সময়ে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। বেশ কিছুদিন সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে। কিন্তু ২৭টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে (দুর্বল প্রতিষ্ঠানের তালিকায়) পাঠানোর ইস্যুতে বিনিয়োগকারীরা ওই সময়ে আন্দোলনে নামেন। এরপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিএসইসি। পরবর্তীতে লেনদেন কমতে থাকে। বর্তমানে লেনদেন আরও কমে তিন থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) এবং ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।