সন্তানের সামনে সিএমপির সাবেক ওসিকে মারধর
লাইভে দেখানো এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড়
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক এক ওসিকে (বর্তমানে কুমিল্লা সিআইডিতে কর্মরত) তার শিশু সন্তানের সামনে ব্যাপক মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন বিএনপি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে ফেসবুক লাইভে গিয়ে তাকে মারধর করার এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাকে মারধর করার সময় তার স্কুল পড়ুয়া শিশু ফ্যাল ফ্যাল করে বাবার দিকে তাকিয়েছিল। লাঞ্ছনার শিকার এই ওসির নাম মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। এ সময় সঙ্গে তার বাচ্চা থাকার কথা বললেও কেউ এতে কর্ণপাত করেননি। তারা অভিযোগ করেছেন, নগর বিএনপি নেতা ও মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে মিছিল-মিটিং করতে দেননি ওসি নেজাম। আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে শাহাদাতকে লাঞ্ছিতও করেছেন। নেজাম শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, একজন পুলিশ অফিসারকে এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও মারধর করা এবং ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সুখকর নয়। আমরা ভেবেছিলাম পটপরিবর্তনের পর দেশ একটি সুস্থ ধারায় ফিরে আসবে। কিন্তু এখন দেখছি তার বিপরীত।
জানা গেছে, সোমবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু সন্তানকে আনতে যান ওসি নেজাম। সন্তানকে নিয়ে তিনি প্রাইভেট কারে উঠছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় কয়েকজনকে নিয়ে আড্ডারত নগরীর চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শহীদ তাকে দেখতে পেয়ে হইচই শুরু করেন। এক পর্যায়ে গাড়িতে ওঠার আগ মুহূর্তে তাকে জাপটে ধরে ফেলেন। তখন শহীদ বলতে থাকেন ‘তুই আরে ন’চিনছ। (তুমি আমাকে চিন নাই) এই বলে তাকে শার্টের কলার ধরে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন ও থানায় যেতে বলেন। এ সময় তাকে মারধরের ঘটনাটি কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করতে থাকেন। লাইভে বিএনপি নেতাকর্মী ও লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে থাকেন তারা। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেশ কিছু নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতা জড়ো হয়ে যায়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা শহীদকে বলতে শোনা যায়, ‘আঁই তোর কাছে হাতজোড় গরগিলাম (আমি তোমার কাছে হাতজোড় করছিলাম)। তুই আর নেতা শাহাদাত ভাইয়ুরে লাঞ্ছিত গইরগুছ (তুমি আমার নেতা শাহাদাত ভাইকে লাঞ্ছিত করেছ)। মানুষকে মানুষ মনে করিসনি শহীদ তার শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলেন। আরেকজন তাকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি মারতে থাকেন। এ সময় ওসি নেজামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি শাহাদাত ভাইকে বাঁচাইছি ভাই, ছাত্রলীগের হাত থেকে বাঁচাইছি।’ এক পর্যায়ে সিঁড়িতে বসে যান ওসি নেজাম। ১৫-২০ মিনিট পর পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান যুগান্তরকে বলেন, ওসি নেজামকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি।
চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শহীদুল ইসলাম শহীদ বলেন, আমরা ওসি নেজামের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ধরে থানা পুলিশকে খবর দিই। তাকে মারধর করিনি।
নেজাম উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকায়। তিনি উপ-পরিদর্শক হিসাবে পুলিশে যোগ দেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে পরিদর্শক হিসাবে পরবর্তীতে তার পদায়ন হয়। তিনি সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি তদন্ত, সদরঘাট থানা, বাকলিয়া থানা, কোতোয়ালি থানার ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পটিয়া থানার ওসি ও সর্বশেষ পিবিআইতে পরিদর্শক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর তাকে সিআইডি, কুমিল্লায় পরিদর্শক হিসাবে বদলি করা হয়। ওসি নেজামের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি ও সদরঘাট থানায় হত্যা মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আদালতে এসব মামলা রুজু হয়।