Logo
Logo
×

শেষ পাতা

৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

গৌরব ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টায় ছাত্রদল

তারিকুল ইসলাম

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গৌরব ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টায় ছাত্রদল

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতি-এই তিন মূলনীতিকে ধারণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা ও ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্য সামনে রেখে ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি এই সংগঠন গঠন করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসাবে পরিচিতি পায় ছাত্রদল। সূচনালগ্ন থেকে সংগঠনটি স্বৈরাচার পতন আন্দোলন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে সুনাম অর্জন ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে ক্যাম্পাসগুলোতে স্ব-অবস্থান নিশ্চিত না করায় ছাত্রদল সঠিকভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেনি। হামলা-মামলা-নির্যাতনের পাশাপাশি অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়েছে। পটপরিবর্তনের পর সংগঠনটি আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অতীতের গৌরব ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে ছাত্রদল। এ উপলক্ষ্যে সারাদেশে ২ দিনের কর্মসূচি পালন করবে সংগঠনটি।

সংগঠনটির সাবেক নেতারা বলছেন, আশির দশকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামেও সামনের সারিতে দেখা গেছে তাদের। অনেক চড়াই-উতরাই, আন্দোলন-সংগ্রাম, অত্যাচার-নির্যাতন সবকিছু মোকাবিলা করে এই অবস্থানে এসেছে ছাত্রদল। এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠারলগ্নে ছাত্রদলের যে দৃঢ় ভূমিকা সেটা অনেকে অনেক কথা বললেও দেশের বাস্তব পরিস্থিতিতে হয়তো তারা যতটুকু ভূমিকা পালন করার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো সমালোচনার মুখে পড়েছে, আবার প্রশংসাও পেয়েছে। তবে ছাত্রদলের প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরায়নি, বরং অতীতের চেয়ে আরও বাড়ছে। এখনো দেশের ছাত্র-যুব সমাজ ও তরুণদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করেই পার হতে হবে। আর এজন্য ছাত্রদলকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আগামী দিনগুলো কিভাবে তরুণ সমাজ নেতৃত্ব দেবে, দেশের নেতৃত্ব দেবে সবকিছু নির্ভর করছে। ছাত্রদলের সঙ্গে বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ভাবমূর্তি জড়িত। সামনে সব ভাবমূর্তি রক্ষা করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাজপথে তাদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছি। পরে ৩৮টি টিম করে দায়িত্ব ভাগ করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। অতীতে ছাত্রদলের ভূমিকা, আগামীতে প্রতিশ্রুতি কী, কেন এই সংগঠন শিক্ষার্থীরা করবে এ নিয়ে বুকলেট করেছি। প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিমের মাধ্যমে গিয়েছি। বুকলেট বিতরণ করেছি। তার সঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়েও কাজ করেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদল ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, সর্বপ্রথম আমরাই গত ২৯ জুন নয়াপল্টনে সমাবেশ করে কোটার পক্ষে অবস্থান নেই। তারপর জুলাইয়ের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কোটার পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করি। ১১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যেদিন হামলা হয়েছিল, তারপরের দিন কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বলেছি এই আন্দোলন যৌক্তিক, সংহতি জানিয়েছি। যেদিন আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়, তারপর কারফিউ দেওয়া হলে প্রথম তা ভঙ্গ করে মিছিল করেছিলাম আমরা ছাত্রদল। তারপর সারাদেশে আন্দোলনে ছাত্রদলের কী ভূমিকা তা জনগণ দেখেছে। এখন নতুন বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশের জনগণ যা চাচ্ছে সেভাবেই আমরা রাজনীতি উপহার দিতে চাই।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির মনে করেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্রদলকে আন্দোলন-সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রদলের সব থেকে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও শতাধিক নেতাকর্মী শহিদ হন। বাংলাদেশের অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কত নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন সেরকম তথ্য আসলে আমরা গণমাধ্যমে দেখিনি। সুতরাং দীর্ঘ ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে আমরা অনেক সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি। তার পরও এ দেশের গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা অবদান রাখার চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের পাঁচ দশকের যে পথচলা সেখানে এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, দেশের মালিকানা দেশের মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। ভবিষ্যতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করব। শত চ্যালেঞ্জ, ষড়যন্ত্র ও প্রপাগান্ডা কাটিয়েও ছাত্রদল দক্ষিণ এশিয়ার সবেচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র সংগঠন হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শহিদ হওয়ার পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা যাওয়া, শাসরিক শাসন জারি করা, সেটার বিরুদ্ধে প্রথম চ্যালেঞ্জ করেছে ছাত্রদল। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এটাও মূলত ছাত্রদলের নেতৃত্বে হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বপক্ষে যে আন্দোলন-সংগ্রাম ধারাবাহিকভাবে চব্বিশ পর্যন্ত ছাত্রদলের একটা অতীত গণতন্ত্রের ঐতিহ্য আগাগোড়া বহন করেছে। বর্তমানে এখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লগ্নে ছাত্রদলের যে দৃঢ় ভূমিকা সেটা অনেকে অনেক কথা বললেও দেশের বাস্তব পরিস্থিতিতে হয়তো তারা যতটুকু ভূমিকা পালন করার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো সমালোচনার মুখে পড়েছে। আবার প্রশংসাও পেয়েছে। তবে ছাত্রদল এখনো প্রাসঙ্গিক। ছাত্রদলের প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরায়নি। বরং অতীতে চেয়ে আরও বাড়ছে।

তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি নির্বাচিত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য থেকে মানুষের আকাক্সক্ষার জায়গা তৈরি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ছাত্রদলই একমাত্র সংগঠন যার কাছে ছাত্র সমাজের প্রত্যাশা থাকবে, দেশবাসীর প্রত্যাশা থাকবে। সেই হিসাবে তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটি অনুষ্ঠিত করার জন্য অব্যাহতভাবে তাদের রাস্তায় থাকতে হবে।

ছাত্রদলের আরেক সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই, আন্দোলন-সংগ্রাম অত্যাচার-নির্যতন সবকিছু মোকাবিলা করেই ছাত্রদল এখানে এসছে। একটি মেধাবীদের সংগঠন ছাত্রদল। গণতন্ত্র রক্ষায় তাই বর্তমান যে কমিটি আছে তাদের ওপর দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ সামনে যে সময়টা এখনো দেশের ছাত্র-যুব সমাজ, তরুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করেই পার হতে হবে। সুতরাং এই তরুণ সমাজের, ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে ছাত্রদল যে ভূমিকা পালন করা দরকার সেটা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বটুকু ছাত্রদলকে গ্রহণ করতে হবে। নেত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার নেতৃত্বে ছাত্রদল সারাদেশে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করছে। সুতরাং আগামী দিনগুলো কিভাবে তরুণ সমাজ নেতৃত্ব দেবে, দেশের নেতৃত্ব দেবে সবকিছু নির্ভর করে ছাত্রদলের এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের ওপর।

কর্মসূচি : প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুদিনের কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রদল। আজ সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় সংসদের কার্যালয়সহ দেশের সব জেলা ও মহানগর ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকাসহ দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বেলা ১১টায় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত, ১২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামের সামনে রক্তদান কর্মসূচি, দুপুর ২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা হবে। এদিন সারাদেশে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরতে র‌্যালি করবে। আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গুলিস্তান স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় সংসদের ৮টি টিমের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম