বগুড়া-১ আসনে চূড়ান্ত জামায়াতের প্রার্থী
বিএনপির টিকিট পেতে তদবির দৌড়ঝাঁপ
নাজমুল হুদা নাসিম, বগুড়া
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নির্বাচন কমিশন গঠন এবং আগামী সেপ্টেম্বরে তফশিল ঘোষণা হতে পারে-এমন খবরে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে নামতে শুরু করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপির কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
তবে তারা বলছেন, দল যাকে টিকিট দেবে, তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বিএনপি তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় ইসলামি জলসা, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।
এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন-জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, সাবেক সংসদ-সদস্য কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান হিরু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন, স্বতন্ত্র মেধা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাদী আলম লিপি প্রমুখ।
জানা যায়, পূর্ব বগুড়ার বাঙালি ও যমুনা নদী ভাঙনকবলিত বগুড়া-১ আসনটি মূলত বিএনপির। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা বেশ কয়েকবার এ আসনে নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান দুদফা নির্বাচিত হন। আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৪ জুলাই উপনির্বাচনে তার স্ত্রী সাহাদারা মান্নান সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ। বিএনপির প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে ব্যালটে তার ধানের শীষ প্রতীকে ৬৬৪ ভোট পড়ে। সাহাদারা মান্নান ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেধা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহজাদী আলম লিপি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যে।
জামায়াতের একমাত্র প্রার্থী জেলা শাখার সাবেক আমির অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন দলীয় সবুজসংকেত পাওয়ায় গণসংযোগ বাড়িয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে গণসংযোগে এগিয়ে আছেন, গত উপনির্বাচনের প্রার্থী একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুরু করে ৪৪ বছর সুখে-দুঃখে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, আছি। দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করছি। ভোটারদের কাছে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক সংসদ-সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দল মনোনয়ন দিলে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার সাবেক চেয়ারমান মাসুদুর রহমান হিরু ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা তৌহিদুল ইসলাম টিটুও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। অপর প্রার্থী মোশাররফ হোসেন চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ছাড়া এলাকার নদী ভাঙনরোধসহ অন্যান্য উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুযোগ দিলে এবং বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে তারা বগুড়াকে এগিয়ে নেবেন। ভাঙনকবলিত সারিয়াকান্দি-সোনাতলা উপজেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করবেন।
এছাড়া গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন শাহজাদী আলম লিপি। ফলে তিনি নৌকার প্রার্থী সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনে শাহজাদী আলম লিপি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে তার স্বজনরা নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়া শহর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক আ স ম আবদুল মালেক জানান, এ জেলায় সাতটি আসনের মধ্যে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন বাদে অবশিষ্ট আসনে তাদের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরপরও মাঠ জরিপ অনুসারে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
জানা যায়, বগুড়া-৭ আসনটি মূলত বিএনপির। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি গাবতলী উপজেলায়। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বেশ কয়েকবার এ আসনে নির্বাচিত হন। তবে তিনি প্রতিবারই ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু প্রমুখ নির্বাচিত হন। এখানে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান প্রার্থী হতে পারেন। তাই কৌশলগত কারণে জামায়াত এ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি।