Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিআইবিএমের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে গভর্নর

ব্যাংক খাতের ব্যর্থতা নিয়ে আত্মসমালোচনা দরকার

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি আর্থিক খাতের অস্তিত্বের জন্য হুমকি * ব্যাংক খাতে সংস্কার নয়, রূপান্তর প্রয়োজন * আর্থিক খাত পুরোপুরি এগোতে পারেনি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যাংক খাতের ব্যর্থতা নিয়ে আত্মসমালোচনা দরকার

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গত ৫৩ বছরে ব্যাংকিং খাত অনেক দূর এগিয়েছে সন্দেহ নেই। তবে ব্যাংকিং তথা আর্থিক খাত যত দূর এগোনো সম্ভব ছিল, তা পারিনি। বিভিন্ন অর্জন সত্ত্বেও অনেক ব্যর্থতা আছে। গভর্নর আরও বলেন, এ ব্যর্থতার দায় কোনো একক গোষ্ঠী বা একক শক্তির নয়। হয়তো সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারতাম; হয়তো ব্যত্যয় হয়েছে, হয়তো হয়নি। কিন্তু এই ব্যর্থতার জন্য আত্মসমালোচনা বা আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে।’

রোববার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন। সঞ্চালনা করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব।

অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান এককভাবে দাঁড়ায় না; অন্যের সহযোগিতা নিয়েই দাঁড়ায়। দেশের আর্থিক খাতও ঠিক তেমনই। আর্থিক খাত ছোট খাত নয়; এর সঙ্গে ব্যাংকিংসহ আরও অনেক খাত জড়িত। আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলে এই খাত খাদের কিনারায় চলে যাবে। ব্যাংকিং খাত বিকাশের জন্য বিআইবিএমের মতো প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের বিকল্প নেই। তবে টেকসই ও পরিবেশ অর্থায়নের মতো নতুন চ্যালেঞ্জিং বিষয়ে ব্যাংকিং খাতের আরও বেশি অবদান রাখার সুযোগ আছে বলে জানান গভর্নর। তিনি বলেন, বিভিন্ন খাতে টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকে ঠিকই, কিন্তু কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হবে, তা ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা জানেন না। সুতরাং এসব বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ধারণা বাড়াতে কাজ করতে পারে বিআইবিএম। এ ছাড়া গ্রিন বন্ডের মতো নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তাও নিয়ে আসতে হবে।

অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব তার গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের আর্থিক খাতে অপরাধ এবং দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে অসহনীয় পর্যায়ে। বিশেষত ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা, আর্থিক খাতের অস্তিতের জন্য হুমকি। বেশ কিছু বড় ঋণখেলাপির কারণে পুরো খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি কখনো এক নয়। অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সহায়তা করা সংশ্লিষ্টদের নৈতিক দায়িত্ব। ব্যাংক সুশাসনের পাশাপাশি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় এবং সামাজিক চাপের মধ্যে আনার কোনো বিকল্প নেই। সমস্যা সমাধানে বাস্তবায়নযোগ্য আইনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিকে ‘রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হরণ’ হিসাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থপাচার বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল অনেক দেশে ব্যাংক খাতের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। সামগ্রিকভাবে দেশে বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাংক সেবায় দুর্নীতি এবং খেলাপির হার তুলনামূলক বেশি। এটা কমাতে হবে।

তিনি গবেষণায় আরও উল্লেখ করেন, দেশের অর্থনৈতিক খাত স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য এখনও ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশে সার্বিকভাবে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজি বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাংক খাতের বিকাশের জন্যও সহায়ক নয়। ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য সম্পূর্ণ আর্থিক খাতকে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। ব্যাংক খাতকে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের দায়িত্ব নিতে হলে সুপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা পর্ষদে এ সংক্রান্ত কর্মক্ষমতা এবং প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে ‘স্বতন্ত্র পরিচালক’দের আরও বেশি ভূমিকা এবং সব পরিচালকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিছু বহুল প্রচলিত শব্দ খুব সাধারণ মনে হলেও তা ব্যাংক সুশাসন সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। ‘মালিক’ বা ‘মালিকপক্ষ’ শব্দগুলো ব্যাংক খাতে ব্যবহার না করে পৃষ্ঠপোষক বা শেয়ারহোল্ডার ব্যবহার করা যুক্তিপূর্ণ মনে হয়। ব্যাংক ক্ষুদ্র আমানতকারিদের অর্থে চলে এবং প্রিন্সিপাল হিসাবে আমানতকারীরাই ব্যাংকের মূল অংশীদার-এ ধারণা ‘আর্থিক স্বাক্ষরতা’ কর্মসূচির অংশ হিসাবে প্রচার করা প্রয়োজন। ‘সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক’ বা ‘বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘সরকারি খাতে পরিচালিত ব্যাংক’ এবং ‘বেসরকারি খাতে পরিচালিত ব্যাংক’ যুক্তিপূর্ণ শব্দ। সরকারি খাতে পরিচালিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিযোগিতা এবং ন্যায্যতার স্বার্থে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক (সরকারি এবং বেসরকারি) অভিন্নভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনি কাঠামো, পর্যবেক্ষণ এবং পরিদর্শনের আওতায় থাকবে।

অনুষ্ঠানে এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতেও এগিয়ে যেতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লক চেইনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা বাড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা একটা অবস্থানে এসেছে। প্রতিটি ব্যাংক এখন গ্রাহকদের ডিজিটাল সহায়তা দিচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো হয়তো ডিজিটাল ঋণ কম দিচ্ছে বা দিতে চাইছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নজর দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মাসরুর আরেফিন বলেন, বিআইবিএম থেকে ২০২৪ সালে সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা ১৭ হাজার ২৮ ঘণ্টা ট্রেনিং পেয়েছে। বিআইবিএম থিংক ট্যাংক থেমে নেই। সময়ের সঙ্গে বদলাচ্ছে।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বিআইবিএম ৫০ বছর তার অঙ্গীকার সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। আইএফএসি ও বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে গবেষণা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে বিআইবিএম নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম