চাকরিচ্যুত সামরিক কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ যানজটে ভোগান্তি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চাকরিতে পুনর্বহাল, পেনশনসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেটের সামনের সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত ও জোরপূর্বক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। রোববারের এ কর্মসূচির ফলে ওই সড়কের আশপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রী ও পথচারীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শৃঙ্খলা পরিপন্থি বিভিন্ন অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘সহযোদ্ধা’র ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা সকাল আটটা থেকে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তারা সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর ফলে জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও, বিজয় সরণিসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষসহ বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া বিদেশগামী অনেক যাত্রী। সড়কে আটকে পড়া বিক্ষুব্ধ যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফায় বাগবিতণ্ডা হতে দেখা গেছে।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সহযোদ্ধার প্রধান সমন্বয়ক মো. নাঈমুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে একটি পর্ষদ গঠন করে দাবিগুলোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরে দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটের দিকে তারা সড়কের একপাশে সরে দাঁড়ান। এ সময় মহাখালী থেকে জাহাঙ্গীর গেট অভিমুখের সড়কে সীমিত পরিসরে যান চলাচল করতে দেওয়া হয়। আর দুপুর একটা নাগাদ ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোদমে শুরু হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সামরিক বাহিনী থেকে যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহাল করা, যাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে না পারবে, তাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করা, এছাড়া সেনাবাহিনীর বিদ্যমান চাকরি বিধিমালা বা আইন সংস্কার করা। অবরোধ চলাকালে বক্তারা বলেন, আমরা আমাদের কষ্ট ও দাবিগুলো তুলে ধরতে ২১ আগস্ট ‘সহযোদ্ধা’ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করি। আমরা ২৭ আগস্ট চাকরিচ্যুত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, সেনাপ্রধানের কাছে তিনটি দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে তিনশ সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় নামের তালিকাসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। পরে আমরা ৫ অক্টোবর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। এই সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা আরও বলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে আমরা সব কার্যক্রম অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করেছি এবং অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানসহ তিন বাহিনী প্রধানকে অবগত করার পরও উনারা আমাদের প্রতি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাই আজ আমরা তিন দফা দাবিতে সপরিবারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। ‘সহযোদ্ধার’ নৌবাহিনীর সমন্বয়ক মো. আব্দুল হাকিম বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ৩৫০ জন অফিসার, ৬০০ জন সৈনিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর নিয়ম রয়েছে- কাউকে চাকরিচ্যুত বা অবসরে পাঠানো হলে তিনি পুনর্নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন না। এ নিয়ম ব্রিটিশ আইনে রয়েছে। আমরা আইনটির সংস্কারেন আবেদন জানিয়েছি। পুলিশসহ সরকারের অন্য যে কোনো সংস্থা থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হলে তার আবেদন বা আদালতে সুবিচার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে এই সুযোগ নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও এই আইনের সংস্কার প্রয়োজন।