পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের নথিপত্র নষ্ট করতেই প্রেতাত্মারা সচিবালয়ে আগুন লাগিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার রংপুরের মিঠাপুকুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি সকালে উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামে মৃত ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের বাড়িতে গিয়ে তার কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নেন। তিনি পরিবারের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। এছাড়াও মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোতাহারুল ইসলাম নিক্সন পাইকার পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন।

রিজভী বলেন, সচিবালয়ে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কঠিন ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের একজন মুখ্য সচিব অনেক টাকা পাচার করেছেন। সচিবালয়ে যেসব ফাইল পুড়েছে তার মধ্যে মুখ্য সচিবের ফাইলটিও ছিল। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিহত ফাইটার নয়নের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি সচিবালয়ে আগুন নিভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়নের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি নয়নের মাস্টার্স পড়ুয়া বড় বোন সীমা আকতারকে এক মাসের মধ্যে চাকরি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রিজভী বলেন, দেশে পরাজিত স্বৈরাচারের অনেক দোসর রয়েছেন। তারা কিন্তু আমলাতন্ত্র, পুলিশসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় এখনো রয়েছেন। সর্বক্ষেত্রে তো পরিবর্তন হয়নি এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা ঘাপটি মেরে আছেন। এসব ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ও দেশকে স্থিতিশীল রাখতে গিয়ে জীবন দিতে হচ্ছে নয়নের মতো ছেলেদের।

এ সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকু প্রমুখসহ মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে মানুষ মেনে নেবে না : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বিকালে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনপ্রত্যাশা-জনাকাঙ্ক্ষার বাইরে গিয়ে ‘অন্য এজেন্ডা’ নিয়ে কাজ করলে দেশের মানুষ মেনে নেবে না। রিজভী বলেন, ‘এখনো চালের দাম কমেনি, চিনি, আলুর দাম কমেনি। শেখ হাসিনার কারণে গত বছর থেকে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়। এবারও যদি আলু আমদানি করতে হয়, তাহলে মানুষ বলবে ড. ইউনূস সাহেবের সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি, তাহলে কী লাভ হলো? অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, ৫ মে রাতে শেখ হাসিনার সরকার কত আলেম-ওলামাকে খুন করেছে সেই হিসাব কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি।’ আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন। কেন? আনুপাতিক নির্বাচন কীসের জন্য? এটা কী তৃণমূলের মানুষ বোঝে?’

যেসব রাজনৈতিক দলের ভোটের সংখ্যা বেশি নয় তারা আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থার কথা বলছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান; যাদের ভোটের সংখ্যা বেশি নয়, তারা এটা একটা কৌশল হিসাবে নিয়েছেন। এটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। এই ধরনের কোনো পদ্ধতি নিয়ে যদি আপনারা ষড়যন্ত্র করেন, এই ষড়যন্ত্র কিন্তু মানুষ ধ্বংস করে দেবে।’

সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মাওলানা মো. সেলিম রেজা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগরের আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন ওলামা দলের জেলার আহ্বায়ক তাজ উদ্দিন খান।