চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীর অভিযোগ
হত্যার হুমকি দিয়েছেন জামায়াত নেতার পিএস
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এক ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩৬ লাখ টাকা লুট করা হয়। এরপর ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধার ও সমস্যা সমাধানের জন্য ৮ লাখ টাকায় ‘চুক্তি’ করেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু টাকা উদ্ধার হয়নি, উলটো ওই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়। নদীতে ফেলে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়। সবশেষ তাকে মামলায় জড়িয়ে খাটানো হয় জেল। জামিনে বের হলেও এখনো পাচ্ছেন বিভিন্ন হুমকি-ধমকি। এসব অভিযোগ নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর পিএস আরমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার রাইয়ান ট্রেডার্সের মালিক খোরশেদ আলম। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী খোরশেদ বলেন, ৫ আগস্ট স্থানীয় জামিলসহ অজ্ঞাত আনুমানিক ২৫-৩০ জন মিলে আমার দোকান রাইয়ান ট্রেডার্স ও রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ লুটপাট করে। এ সময় তারা ক্যাশে থাকা ৩৬ লাখ টাকা লুট করে এবং দোকানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় আমি ১২ আগস্ট আদালতে মামলা করি। মামলায় ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ক্যাশ ও মালামাল লুটের বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপর ১৭ আগস্ট আমার পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী ওবায়দুলের কাছ থেকে তার ফুপাতো ভাই আদিল আমার নম্বর সংগ্রহ করেন। কিছুক্ষণ পর আদিল ফোন করে জানান, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহজাহান চৌধুরীর একান্ত সচিব মো. আরমান উদ্দিন আমার সঙ্গে কথা বলতে চান। সেই অনুযায়ী পরদিন বেলা ১১টায় ঠাকুরদিঘী পেট্রোল পাম্পে যাই আদিলের সঙ্গে দেখা করতে। পরদিন দুপুর ২টার দিকে কেরানিহাটের আগে বান্দরবান রোডে রোজভ্যালি নামক রেস্তোরাঁয় আমি আমার ছোট ভাই জাহেদকে নিয়ে আরমানের সঙ্গে দেখা করি। আরমান আমাকে বলেন, আপনারা এতদিন ব্যবসা করেছেন। আমরা গত ১৫ বছর ব্যবসা করতে পারিনি। তাই আমাদের এখন টাকার দরকার। আপনি আমাকে আগামীকাল বেলা ১১টার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেবেন। আর এই কথা আপনার ভাইতো দূরের কথা আপনার স্ত্রীও যেন না জানে। তিনি বলেন, চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া ও মেরে ফেলার হুমকি দেন। এরপর দাবিকৃত চাঁদার জন্য নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন পিএস ও তার লোকজন।
একপর্যায়ে ৮ লাখ টাকায় বোঝাপড়া হয় এবং নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৫ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন ব্যবসায়ী খোরশেদ। ২৮ আগস্ট আরমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটের ঘটনা মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে তাকে স্থানীয় ঠাকুরদীঘি পেট্রোল পাম্পে ডেকে নিয়ে যান। সেখান পৌঁছার পর আদিল, আবদুর রহমান, রিদোয়ানুল হক ও আবদুল জলিল নামে আরও কয়েকজন তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে হাত-পা বেঁধে ফেলে। ওই মাইক্রোবাসে তাকে নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার একটি ভবনের চারতলায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আরমান অবস্থান করছিলেন। সেখানে আরমান তাকে পাঁচ লাখ টাকার চেক ক্যাশ না হওয়ার অভিযোগে মারধর করেন এবং আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় বস্তায় ভরে কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। সেখানে তার কাছ থেকে ৯টি খালি স্টাম্পে জোর করে সই নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে চোখ বেঁধে নামিয়ে মাইক্রোবাসে চান্দগাঁও থানায় নিয়ে গিয়ে লোহাগাড়া থানার একটি মিথ্যা মামলার আসামি বানিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ২৯ আগস্ট পুলিশ তাকে আদালতে চালান দিলে সেখান থেকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, ৩ মাসের বেশি কারাভোগ করে সম্প্রতি জামিনে আসার পর আরমান তাকে আবারও মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণভয়ে তিনি বাড়িতেও যেতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের অভিযোগ অস্বীকার করে আরমান উদ্দিন বলেন, তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। উনি দাবি করেছেন, ৫ আগস্ট তার সঙ্গে দেখা করেছি। আমি ৫ আগস্ট কারাগারে ছিলাম। কারাগার থেকে বের হয়েছি ৮ আগস্ট। এ থেকে প্রমাণিত হয় তার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আরমান বলেন, ব্যবসায়ী খোরশেদ একজন ‘ভূমিদস্যু’। এখন পর্যন্ত তিনি (খোরশেদ) স্থানীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি। অনেকের জমিজমা, দোকানপাট দখলে রেখেছেন। সামনেও দখলে রাখতে চান।