শিগগিরই ড্যাপ সংশোধন
বাড়ছে ভবনের উচ্চতা আয়তন ও ইউনিট
শিগগিরই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মাস্টারপ্ল্যান ড্যাপের সংশোধন চূড়ান্ত হচ্ছে। এর ফলে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার ভবনের উচ্চতা, আয়তন ও ইউনিট বাড়বে। এই বিষয়গুলো নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় যুক্ত হবে। পাশাপাশি ইমারত নির্মাণ বিধিমালার বিশেষ প্রকল্প অনুমোদনের শর্তও শিথিল করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব ও নগর পরিকল্পনাবিদরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
রাজউকের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান ড্যাপে ডেনসিটি জোন (জনঘনত্ব বিবেচনায় এলাকা বিভাজন) এলাকাভিত্তিক ছিল ৩৫০টির বেশি। এর মাধ্যমে পুরো রাজউক এলাকার বিদ্যমান সড়ক, উন্মুক্ত স্থান ও নাগরিক সেবার আলোকে ভবনের উচ্চতা, আয়তন ও ইউনিট নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভূমি মালিক ও আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে ডেনসিটি জোন কমিয়ে ৬৫-তে নামিয়ে এনেছে। এর ফলে ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআরের মান অধিকাংশ এলাকার দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যাবে। একই হারে ভবনের আয়তন ও ইউনিটও বাড়বে। এলাকাভেদে তিন থেকে চারতলা পর্যন্ত ভবনের উচ্চতাও বাড়বে।
সূত্রগুলো জানায়, নগর পরিকল্পনার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একরপ্রতি জনসংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন রয়েছে; ড্যাপ সংশোধোনের মাধ্যমে এই জনঘনত্ব আরও কয়েকগুণ বাড়বে। এছাড়া প্রতি বর্গকিলোমিটার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষের বসবাস করার কথা। তবে ঢাকার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবুও মহল বিশেষ জনঘনত্ব বাড়াতে মরিয়া। এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান যুগান্তরকে বলেন, এই ড্যাপের গেজেট হওয়ার পর কারিগরি পরামর্শ উপেক্ষা করে একদফা সংশোধন করা হয়েছে। এরপর আবারও ড্যাপ সংশোধনের তোড়জোড় করা হচ্ছে। রাজউকের তড়িঘড়ি দেখে মনে হচ্ছে, তারা আবাসন ব্যবসায়ীদের সুবিধা করে দিতে বদ্ধপরিকর। শহরের বাসযোগ্যতা ও জনঘনত্বের বিষয়ে রাজউকের কোনো মাথা-ব্যথা নেই।
তিনি বলেন, শহরকে বাসযোগ্য করে তোলার মূল দায়িত্ব রাজউকের। কিন্তু রাজউক নানান অজুহাত দেখিয়ে ড্যাপ সংশোধন করে ভবনের উচ্চতা, আয়তন এবং ইউনিট বাড়ানোর চেষ্টা করছে। একটি গ্রুপকে তারা সন্তুষ্ট করতে মরিয়া, এখানে যে জনস্বার্থ রয়েছে, সেসব দেখার তাদের কোনো সময় নেই।
তিনি জানান, রাজউকের ড্যাপ সংশোধনের খসড়া কপি আমরা পেয়েছি, তা দেখে বুঝতে পেরেছি; এটা সংশোধন করা হলে এফএআরের মান দুই থেকে তিনগুণ বাড়বে। এতে ভবনের উচ্চতা এলাকাভেদে তিন থেকে চার তলা পর্যন্ত বাড়বে। পাশাপাশি ভবনের আয়তন ও ইউনিটও বাড়বে। যার ফলে শহরে আরও বহু নতুন মানুষের আগমন ঘটবে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট মো. ওয়াহিদুজ্জামান সোমবার রিহ্যাব ফেয়ারের সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, আবাসন খাত সংকটে রয়েছে। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যের দাম ওঠা-নামা করা এবং ড্যাপের ফ্লোর এরিয়া (এফএআর) কমিয়ে দেওয়ায় এই সংকট কাটছে না।
তিনি জানান, ড্যাপ সংশোধন সংক্রান্ত একটি কমিটি হলেও কবে তা বাস্তবে রূপ পাবে; তা অনিশ্চিত। এজন্য বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মাণ অনুমোদন কার্যক্রম বহাল রাখলে আবাসন ব্যবসায়ী ও ভূমি মালিকদের জন্য সুবিধা হবে। বিষয়টি রাজউককে ভেবে দেখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার সোমবার রিহ্যাব ফেয়ার-২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর ভবনের উচ্চতা এবং ইমারত নির্মাণ বিধিমালার জটিলতা নিরসন করা হবে।
তিনি বলেন, রিহ্যাবের দাবি রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করার। সেটি বিবেচনায় রেখে রিহ্যাবের দাবি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এছাড়া ঢাকার চার পাশে কয়েকটা বাণিজ্যিক শহর করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা শহরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০২২-৩৫) বা ড্যাপ ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট মাসে অনুমোদিত হয়। পরের বছরই আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তা আবার সংশোধন করা হয়। কোনো ধরনের কারিগরি সুপারিশ ছাড়া এটা সংশোধন করা হয়। ৫ আগস্টের পর বিদ্যমান ড্যাপকে বৈষম্যমূলক দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানায়। এরপর দফায় দফায় স্থপতি ইনস্টিটিউট, প্লানার্স ইনস্টিটিউট এবং রিহ্যাব পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক। গত ২২ ডিসেম্বরে ড্যাপের বিষয়ে মতামত দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। যে কোনো সময় এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হতে পারে।