Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পুলিশের দাবি

পূর্ববিরোধের জেরে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা, আটক ৫

Icon

কুমিল্লা ব্যুরো ও চৌদ্দগ্রাম দ. প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পূর্ববিরোধের জেরে মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা, আটক ৫

পূর্ববিরোধের জেরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গলায় জুতার মালা দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে এ ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন-চৌদ্দগ্রামের কুলিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন মজুমদার, জামাল উদ্দিন মজুমদার, ইলিয়াছ ভূঁইয়া, কুলিয়ারা জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদ ও ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ। তবে ঘটনার দুদিন অতিবাহিত হলেও কোনো মামলা হয়নি। মামলার বাদী ভুক্তভোগী পরিবার হবে নাকি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে-এমন দোটানা চলছে। এরই মাঝে স্থানীয় বিএনপি ও মুক্তিযোদ্ধারা ভুক্তভোগীর পক্ষে মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। ঘটনাটি নিয়ে কোনো মহল যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখছে প্রশাসন। তাই জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। 

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জাম প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জাতির বীর সন্তানের লাঞ্ছিত করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিও ফুটেজে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে ৫ জনকে আটক করা হয়। আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা কানুর সঙ্গে একই এলাকার আবুল হাশেম মজুমদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৮ সালে কুলিয়ারা হাইস্কুলে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কানু স্কুলের ভোটকেন্দ্র থেকে আবুল হাশেম মজুমদারের বড় ভাই আব্দুল হালিমকে মারধর করে শার্টের কলার ধরে টেনে এনে পানিতে ফেলে দেন। আব্দুল হালিম ২০২৪ সালে মারা যান। ভাইয়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে ওইদিন আবুল হাশেম পাতড্ডা বাজার থেকে আব্দুল হাই কানুকে ধরে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে আসেন। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ২২ ডিসেম্বর কানু এলাকায় প্রবেশ করলে আবুল হাশেমের সামনে পড়েন। এরপর সেই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে। 

পুলিশ বলছে, ঘটনার পুরো নেতৃত্ব দেন জামায়াত সমর্থক আবুল হাসেম। জামায়াত ঘটনার সঙ্গে দলের কারও সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সোমবার ঘটনায় জড়িত থাকায় দুই সমর্থককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। এরা হচ্ছেন-চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কুলিয়ারা গ্রামের মৃত আবদুল বারেকের ছেলে প্রবাসী আবুল হাশেম ও মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মু. অহিদুর রহমান। ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে তাদের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। সোমবার দুপুরে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। ঘটনার পরই প্রাণভয়ে মুক্তিযোদ্ধা কানু এলাকা ছাড়েন। পরিবার জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে ফেনীতে অবস্থান করছেন। কানুর ছেলে স্থানীয় বাতিসা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, আমরা জীবন নিয়ে শঙ্কিত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে টিকে থাকতে পারব না। প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করলে ভালো হয়। 

স্থানীয় সূত্র বলছে, মুক্তিযোদ্ধা কানু ছিলেন উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তার সঙ্গে স্থানীয় সাবেক এমপি ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের ছিল দলীয় বিরোধ। এলাকায় ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা রানা হত্যা মামলায় কানু ও তার ছেলে বিপ্লব ছিলেন চার্জশিটভুক্ত আসামি। এ মামলায় কানু গ্রেফতারও হন।

মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করায় সুজনের নিন্দা : চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে এ ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার সুজনের সভাপতি এম. হাফিজউদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে প্রথমে এ ঘটনার সঙ্গে তাদের দলের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করা হলেও পরবর্তীতে আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমান নামের দুই সমর্থককে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুজন মনে করে, এই ধরনের একটি ধৃষ্টতাপূর্ণ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি ও নির্দেশনা দেওয়া এবং দল থেকে বহিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়; দ্রুততার সঙ্গে দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনাটাই বেশি জরুরি।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম