পদক পেলেন ৭২ বিজিবি সদস্য
বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে সাত সদস্যের কমিশন
রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থাতেই আর ঢুকতে দেওয়া হবে না-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্রে বিজিবি দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে বিজিবি পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। উপদেষ্টা বলেন, পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে কমিশন গঠনসংক্রান্ত ফাইলে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর তথা অনুমোদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক এএলএম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন-সামরিক বাহিনীর দুজন, সিভিল সার্ভিসের একজন ও পুলিশের একজন কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলমান রয়েছে। শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী তাকে ফেরত আনা হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই মাসে নয়, বরং গত দেড়-দুই বছরে দেশে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের আর কোনো অবস্থাতেই এ দেশে প্রবেশ করতে দেব না। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে সীমান্ত আছে, তার পুরোটাই এখন আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বিজিবির আনুষ্ঠানিক আলোচনার যে প্রক্রিয়া ছিল, তা এখন আর নেই। আরাকান আর্মির সঙ্গে এখন আনঅফিশিয়ালি কথা বলা গেলেও অফিশিয়াল কথার সুযোগ নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত নিরসনের চেষ্টার কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি বিস্তারিত বলতে পারব না। এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, দুর্নীতির কারণেই সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এই দুর্নীতির সঙ্গে বিজিবি জড়িত কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা ওইখানে গেলে জানতে পারবেন পরিস্থিতি কী। ওইখানে যুদ্ধ হচ্ছে। ওইখানের পরিস্থিতিও আপনারা জানেন। রোহিঙ্গারা দুর্নীতির মাধ্যমেই প্রবেশ করে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবিকে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে এই বাহিনীকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে হবে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। সীমান্ত রক্ষাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ দেশ গঠনমূলক বিভিন্ন কাজে বিজিবির ভূমিকা ও পেশাদারি প্রশংসার দাবিদার। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সাহসী ও গৌরবময় ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এই বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীকসহ সর্বমোট ৮১৭ জন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন। তিনি এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের গভীর আত্মত্যাগের কথা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা ও চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবি সদস্যদের হতে হবে দৃঢ় ও নির্ভীক। একইভাবে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় হতে হবে দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব। তিনি এ সময় ‘চেইন অব কমান্ড’ সুদৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে সততার সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) ড. নাসিম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিগত বছরে কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ উপদেষ্টা ৩৩ জন বিজিবি সদস্যকে পদক পরিয়ে দেন। এ বছর ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১২ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক-সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ২৪ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-সেবাসহ (পিবিজিএমএস) ৭২ জন বিজিবি সদস্যকে বিভিন্ন পদকে ভূষিত করা হয়। পরে উপদেষ্টা বিজিবি আয়োজিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেন।