Logo
Logo
×

শেষ পাতা

আইনজীবী হত্যায় পুলিশি তদন্ত নিয়ে শঙ্কা

বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে কমিটির পদত্যাগ

Icon

আহমেদ মুসা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে কমিটির পদত্যাগ

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা ও আদালতপাড়ায় চিন্ময় দাস অনুসারীদের তাণ্ডবের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় জেলা আইনজীবী সমিতি গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত না করে কিছু সুপারিশ দিয়ে পদত্যাগ করেছে। তদন্ত টিমের প্রধান ও সাবেক মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার সমিতি বরাবর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে মতামত দিয়েছেন। তিনি জেলা জজ পদমর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে এ ঘটনা তদন্ত করার সুপারিশ করেছেন। তারা মনে করছেন, ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না। তাই পুলিশি তদন্তে ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিরা আইনের আওতায় নাও আসতে পারে। এ কারণে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। এদিকে সাইফুল হত্যার ঘটনায় তার বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয়টি মামলায় গ্রেফতার হন ৪০ জন। তাদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেফতার রয়েছেন। 

সমিতি সূত্র জানায়, আদালতপাড়ায় তাণ্ডব ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনের ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করে জেলা আইনজীবী সমিতি। তখন আইনজীবী আবদুস সাত্তারকে প্রধান করে ঘটনা তদন্তের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করা হয়। কমিটির মধ্যে আরও রয়েছেন সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাশেম কামাল, সদস্য অ্যাডভোকেট জাফর ইকবাল, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান অনু প্রমুখ। 

তদন্ত টিমের সদস্যরা জানান, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা এবং আদালত এলাকায় তাণ্ডব, গাড়ি ভাঙচুরসহ এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতটি মামলা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কোনো জামিন আবেদন নামঞ্জুর হলে বা রিজেক্ট হলে তার নকল কপি নিতে ৪-৫ দিন পর্যন্ত দরকার হয়। কিন্তু ইসকন নেতা চিন্ময় দাসের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন রিজেক্ট (নামঞ্জুর) হওয়ার পর এক ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাইড কপি বা নকল পেয়ে গেলেন। ওইদিন আবার সঙ্গে সঙ্গে মিস কেস দাখিল করে শুনানির জন্য তারিখ পেয়ে গেলেন। আদালতে কোনো চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি আনলে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থির অবনতি হতে পারে এমন আসামি আনলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণে চেকপোস্ট বসানো হয়। লালদীঘির পাড়, জহুর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া আসামিকে খুব সকালে আদালতে আনা হয়। কিন্তু চিন্ময় দাসের ক্ষেত্রে এসব কিছুই করা হয়নি। তাকে আদালতে আনা হলো সকাল ১০টার পর। ওইদিন কোথাও চেকপোস্ট বসানো হয়নি। তাণ্ডব চালানোর ঘটনায় জড়িতরা বিনা বাধায় আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে। প্রশাসন অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আসামি পুলিশের ভ্যানে মাইক ব্যবহার করে কিভাবে উসকানি দিল। এসব ঘটনায় ইতোমধ্যে কোতোয়ালি থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। যা পুলিশ তদন্ত করছে। 

তদন্ত টিমের প্রধান আইনজীবী আবদুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার দিন একাধিক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। সাধারণ কেউ তদন্ত করলে সেটি ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। তাছাড়া আমাদের কমিটিতে যারা আছেন সবাই আইনজীবী। তাই আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে। এ কারণে আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। একজন জেলা জজ পদমর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঘটনাগুলো তদন্ত করা হোক। আমরা সমিতির কাছে এ রকম সুপারিশ দিয়েছি এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছি। পাশাপাশি তদন্ত টিম থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। এ বিষয়ে রোববার হয়তো সমিতি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত টিমের প্রধানসহ সবাই পদত্যাগ করেছেন। এটি শুনেছি। এখনও কাগজ পাইনি। হয়তো রোববার পাব। আমরা (আইনজীবী সমিতি) বসে একটি সিদ্ধান্ত নেব। 

২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলাম। সেদিন তাকে বহন করা প্রিজন ভ্যান দুপুর ১২টা থেকে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আটকে রাখে তার অনুসারীরা। এ সময় চিন্ময় অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধ অনুসারীরা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সাংবাদিকদের অন্তত ৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর প্রতিবাদ করলে আইনজীবীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় চিন্ময় অনুসারীরা। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।


Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম