চলছে শুমারির তথ্য সংগ্রহ
আর্থিক কর্মকাণ্ডের খোঁজে মাঠে তথ্য সংগ্রহকারীরা
চলছে অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ। আর্থিক কর্মকাণ্ডের খোঁজে মাঠ থেকে মাঠে ছুটছেন তথ্য সংগ্রহকারীরা। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। লক্ষ্য পূরণে শেষ সময়ে যেন দম ফেলানের ফুরসৎ নেই সংশ্লিষ্টদের। মানুষকে বুঝিয়ে ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চতুর্থবারের মতো অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করছে। ১০ বছর পরপর এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শীতের সকালে যখন চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা, তখন কালীগঞ্জের নাগরি ইউনিয়নের স্বাধীনতা চত্বরের (সাবেক ময়েজ উদ্দিন চত্বর) নিশাদ স্টোরে দেখা হয় গণনাকারী মো. হাসমত উল্লাহর সঙ্গে। তিনি ট্যাব হাতে এই স্টোরের মালিক (মুদি ও চা বিক্রেতা) আসলামের কাছে তথ্য সংগ্রহ করছেন। প্রথম দিকে আসলাম তথ্য দিতে ভয় পাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন তার আয়ের ওপর কর ধার্য করা হবে কিনা। শেষ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহকারী তাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, এসব তথ্য সরকারি নীতিনির্ধারণের কাজে ব্যবহার হবে। এর সঙ্গে রাজস্ব বোর্ডর কোনো সম্পর্ক নেই। সুন্দরভাবে সব তথ্য দিয়ে সহায়তা করলেন তিনি। এ সময় আসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমরা ছোট ব্যবসা করি এর হিসাব সরকারের কাছে থাকলে আমাদেরই ভবিষ্যৎ ভালো হবে।
তাই আমি খুশি। এছাড়া একই ইউনিয়নের গলান নাওটানা মোড়ের মাসুক স্টোরের মালিক মাসুক সহজেই তথ্য সংগ্রহকারীকে তার ব্যবসার সমস্যা, সুবিধা, আয় সব বিষয়েই তথ্য দিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, দেশের কাজে সামান্য অবদান রাখতে পারলেই খুশি। পানজোরা দক্ষিণপাড়া গ্রামের অটোচালক কাদের শেখের বাড়িয়ে দিয়ে দেখা যায় তিনি সকালেই বেরিয়ে গেছেন। এ সময় তথ্য সংগ্রহকারী নুশরাত জাহান তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করছেন। নুশরাত জানান, তাদের নিজস্ব অটোরিকশা আছে। এর মালিকের দেখা পাওয়া কঠিন। তাই তার স্ত্রীর কাছে তথ্য নিচ্ছি। পানজোরার সুখপাড়া গ্রামের সামসুন রাহারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি পাট এবং কটন সুতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিকে তৈরি করছেন। তার কাছে কাজ নিয়ে ওই গ্রামের আরও ৩০ জন নারী এ কাজ করছেন। তারা সবাই মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। এসব পণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। তিনি জানান, পরিবারের কাজের ফাঁকে আমরা এসব তৈরি করে ভালোই আয় করছি। এ সময় তথ্য সংগ্রহকারী তানজিলা আক্তার তন্বি জানান, আমার লক্ষ্য হলো ১৫২টি আর্থিক কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা। আমি এরই মধ্যে ৭৭টির তথ্য নিয়েছি। সবাই খুব সহযোগিতা করছেন। প্রায় একই রকম মন্তব্য করেন হাসমত উল্লাহসহ অন্য তথ্য সংগ্রহকারীরা।
মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারীদের কাজের দেখভাল করছিলেন এলাকা-৭ এর সুপারভাইজার সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, আমার দায়িত্বে ৬ জন তথ্য সংগ্রহকারী আছেন। তারা সবাই সঙ্গে কাজ করছেন। গাজীপুর জেলা শুমারি সমন্বয়কারী মুরশিদা ইয়াসমিন বলেন, আমার দায়িত্বে ৭৭৯ জন তথ্য সংগ্রহকারী আছেন। প্রথম দিকে কোথায় সমস্যা হলো তথ্য সংগ্রহকারীরা নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করেন। তারা না পারলে সুপারভাইজারকে জানান। এতেও সমাধান না হলে আমাকে জানালে আমি ফোনে অথবা নিজেই হাজির হয়ে যাই ঘটনাস্থলে। এভাবে কিছু সমস্যার সমাধান করেছি। এখনো বড় কোনো সমস্যা হয়নি। কথা হয় সুপারভাইজিং অফিসার উপরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তকে বলেন, গ্রামে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে বড় কারখানায় মাঝে মধ্যে তথ্য সংগ্রহগকারীদের ঢুকতে সমস্যা হয়। আমরা তখন সিটি করপোরেশনের সহায়তা নেই। তবে এখন পর্যন্ত সমস্যার কারণে তথ্য না পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ এর প্রকল্প পরিচালক এসএম শাকিল আখতার জানান, সারাদেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বিবিএস। অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে প্রায় ৭০টি প্রশ্ন উঠে আসবে। এবারই প্রথম ট্যাবের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতিতে এই শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই লিস্টিংয়ের মাধ্যমে এক কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে এবং এর বাইরে থেকেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবার শুমারিই প্রথমবারের মতো দেশে কতজন বিদেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের পদে কর্মরত এবং নারী-পুরুষ কতজন সেসব তথ্য তুলে ধরা হবে।