যানজট ও দূষণ নিয়ে ৪ উপদেষ্টার বৈঠক
এক মাসের মধ্যে উন্নতি না হলে কঠোর ব্যবস্থা
যানজট পরিস্থিতি উন্নয়নে এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সড়কে যানজট কমানো ও শৃঙ্খলা ফেরাতে এক সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে রাজধানীর যানজটপ্রবণ স্পট চিহ্নিত করাসহ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে চার উপদেষ্টার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। ‘সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ’ করণীয় নির্ধারণে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আইজিপি, এনবিআর চেয়ারম্যান, বিআরটিএর চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভা শেষে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সেবার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি করতে না পারলে বিআরটিএর চেয়ারম্যানসহ সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বিআরটিএকে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। অবস্থার উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় যেন চলতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে এবং ফিটনেস দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বেসরকারি খাতের সহায়তা নিতে হবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় যেসব জায়গায় যানজট হয়, সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। বিশেষ করে রেল ক্রসিং ও ফ্লাইওভারে উঠানামার স্থানে যানজট হয়। ট্রাফিক পুলিশকে ২ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যানজট পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়। রাস্তার মধ্যে কোনো গাড়ি অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট হলে, সেই গাড়িকে জরিমানার বদলে আটক করে নিয়ে আসতে হবে।
ফাওজুল কবির খান বলেন, স্কুলবাস চালুর একটা প্রস্তাব এসেছে। এটা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেব। তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসব। এলোমেলো করে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার কারণে যে যানজট হয়, এর বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিবহণ মালিকরা গুলশানে ঢাকা চাকা যেভাবে চলে, সে আদলে একটি পরিষেবা চালুর আশ্বাস দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ের একপর্যায়ে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এহছানুল হক জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের আওতায় নয়টি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনা শুরু হবে। পরে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির জানান, মে মাসের মধ্যে ২০ বছরের পুরোনো বাস ঢাকা থেকে তুলে দিতে হবে। এটা পরিবহণ মালিকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, তারা যদি এক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পেতে আগ্রহী, তাহলে সরকার তাদের সহযোগিতা করবে। রাজধানীর বায়ুদূষণের বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক উপদেষ্টার পাশে থাকা পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বায়ুদূষণ রোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ১ মাস, ২ মাস বা ১ বছরে বায়ুদূষণ বন্ধ করা যাবে না। তবে বায়ুদূষণের কারণে যে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, তা কমানোর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আশুলিয়ার ইটভাটাগুলোর কারণে ঢাকায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। এলাকাটি ইটভাটামুক্ত করা যায় কিনা, সেটা আমাদের ভাবনা আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদাবক্স চৌধুরী বলেন, রিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তৎপরতা শুরু হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পরিবহণ বিশৃঙ্খলার কারণে সড়কে যানজট তৈরি হয়। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় যানজট তৈরি হয় না। সেখানে শৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচল করলে কেন ঢাকার অন্য সড়কগুলোতে গাড়ি চলবে না। তিনি কয়েকটি সড়কে একমুখী গাড়ি চলাচল শুরুর ওপর জোর দেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সভায় বলেন, বায়ুদূষণে বছরে দুই লাখ মানুষ মারা যান। আর শব্দদূষণে ৮৮ শতাংশ পরিবহণ শ্রমিকের শ্রবণশক্তির সমস্যা হয়, অথচ সেটা নিয়ে পরিবহণ নেতারা কোনো কথা বলেন না। শব্দ ও বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণে এখনই সময় কিছু কাজ করে যাওয়ার, নইলে কেউ করবে না।
যানজটের জন্য পুলিশের ভূমিকা অনেকটা দায়ী উল্লেখ করে এ উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের ভূমিকা হওয়া উচিত এনফোর্সমেন্ট, কিন্তু করা হচ্ছে হেরেসমেন্ট। পুলিশের ওরিয়েন্টেশন দরকার। এতে কয়েকজন কর্মকর্তা একই রুটে একাধিক কোম্পানির গাড়ি চলাচল বন্ধ, পরিবহণে চাঁদাবাজি বন্ধ, সড়ক আইন সংশোধন, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত চালককে জামিন দেওয়া, রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ করাসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় অন্যদের মধ্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলমসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কর্মকর্তা, পরিবহণ খাতের মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।