আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহণমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৩ মাস দেশের ভেতরে কোথায় লুকিয়ে ছিলেন, তা সরকারের জানা ছিল না। ওবায়দুল কাদের কোথায় ছিলেন, আমরা যদি জানতাম তবে ধরে ফেলতাম। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন। এদিকে দুপুরে সচিবালয়ে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেছেন, এই কমিটিতে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সশস্ত্র বিভাগ ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এই কমিটির সদস্য কতজন থাকবেন তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচ, সাত অথবা নয়জন হতে পারেন। সশস্ত্র বিভাগ থেকে সদস্য বেশি থাকবেন।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কমিটি গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এসব কমিটিতে অনেকে আসতে চান না। সবার থেকে নাম নেওয়া হবে। নাম সংগ্রহ করতে সময় লাগবে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি দেওয়া হবে। কমিটি ও কমিশনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে জানান তিনি। আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বিভ্রান্তি নেই বলেও জানান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল কয়েক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। তদন্ত কমিশন গঠনে অন্তর্বর্তী সরকার গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

সেগুনবাগিচায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে এক সাংবাদিক বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ৩ মাস বাংলাদেশে লুকিয়ে থেকে কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন? জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘উনি কীভাবে জানলেন ৩ মাস লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম। ওই খবর যদি আমাদের দিতেন লুকিয়ে আছে, অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারপোলকে আমরা আবার রিমাইন্ডার দিয়েছি। আমরা সময়-সময় অবহিত করছি, তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য।’

সারা দেশে ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা দোষী নয়, তাদের কিছুই হবে না। ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নির্দোষ কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। হবেও না।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। পুলিশের মনোবলে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মনোবল বেড়েছে। একটা বড় ঘটনা ঘটার পর ২ দিনে পরিবর্তন আসবে না। একটা ঝড় হয়ে গেলে ঘরবাড়ি সংস্কারে সময় লাগে।

অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন সাংবাদিকের এমন বক্তব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছেন, তারা অপরাধী।’

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি নিজেও বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সোচ্চার ছিলেন। একজন সাধারণ নাগরিক ও সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার দাবি করে আসছেন। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৫ কার্য দিবসের মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এটি একটি স্বতন্ত্র কমিটি হবে। আর পুনঃতদন্ত সেটা আদালতের বিষয়। এর আগে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে আদালতে দুটি মামলা চলমান। তাই কমিশন গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এজন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কমিশন গঠন হচ্ছে না। তার দুদিন পর রোববার তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করা হলো।

বিডিআর হত্যাকাণ্ড, আলটিমেটাম দিয়ে উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত : ঢাবি প্রতিনিধি জানান, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতে আগামী ৫ দিনের মধ্যে কমিশন গঠনের আলটিমেটাম দিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তদন্ত কমিটি গঠন নিয়ে মঙ্গলবার সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (অব.) ব্রিফিংয়ের পর কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে একথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার।

তিনি বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য আমরা ৫ দিন সময় দিচ্ছি। ৫ দিনের মধ্যে যদি জাতির সামনে কমিশন গঠনের তথ্য প্রকাশ করা না হয় এবং এতে কোনো দালাল থাকলে তাদের সঙ্গে রাজপথে দেখা হবে।’ তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিশনে দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের রাখতে হবে, ভুক্তভোগীদের রাখতে হবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র প্রতিনিধি রাখতে হবে। এর আগে, বেলা ১১টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র-জনতা ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা শহিদ মিনার এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। তারা ‘প্রশাসনের ছদ্মবেশে, ভারত কেন বাংলাদেশে; তুমি কে আমি কে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা; বিচার নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।