হজের নিবন্ধন শেষ হচ্ছে আজ
কোটার অর্ধেকের বেশি এখনো খালি
হজ প্যাকেজের মূল্য প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি * সাড়ে তিন মাসেও মেলেনি প্রত্যাশিত সাড়া
হুমায়ুন কবির
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
২০২৫ সালের হজ নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে আজ। দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করেও হজযাত্রীদের সাড়া মেলেনি। এখনো অর্ধেকের বেশি কোটা খালি রয়েছে। চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে তিন মাস সময় পেয়েও সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৫৫ হাজার ৯২৫ জন হজযাত্রী, যা প্রায় ৪৪ শতাংশ।
সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে এখনো কোটা খালি রয়েছে ৭১ হাজার ২৭৩ জনের, যা ৫৬ শতাংশের বেশি। এদিকে হজের নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী হজ পালনে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য যে টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এবারও হজ প্যাকেজের মূল্য হজযাত্রীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এবার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এছাড়া হজ প্যাকেজে অতিরিক্ত বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে। পাশাপাশি পছন্দ অনুযায়ী হজ প্যাকেজ তৈরি করতে নানা জটিলতা রয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে এবার নিবন্ধনে সাড়া কম।
এই বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যেহেতু আমাদের হাতে সময় কম। তাই নতুন করে হজের নিবন্ধনের সময় বৃদ্ধি করার সুযোগ নেই। এছাড়া যেটুকু সময় আছে এতে হজযাত্রীর সাড়া আরও মিলবে। তাছাড়া হজ একটি ধর্মীয় বিষয়। তাই যাদের ইচ্ছা বা সুযোগ আছে তারাই আগ্রহ দেখাবেন। যারা নিবন্ধন করবেন তাদের নিয়ে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করে দেব।
জানা যায়, এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ৬৩৫ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন ৫১ হাজার ২৯০ জন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছরের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৩০ অক্টোবর সরকারিভাবে দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ঘোষিত সাশ্রয়ী সাধারণ প্যাকেজ-১ অনুযায়ী খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর চলতি বছরের প্যাকেজ-১ এর চেয়ে এক লাখ ৯ হাজার ১৪৫ টাকা কম খরচ হবে। অন্য প্যাকেজে (প্যাকেজ-২) খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। এই হিসাব খাবার খরচ ছাড়া।
এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে সরকারিভাবে হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮৭ টাকা খরচ হয়েছিল। বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এবার বিশেষ প্যাকেজ করা হয়নি।
সরকার বেসরকারি মাধ্যমে সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা (খাবার খরচ ছাড়া) নির্ধারণ করে দিয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সি একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে বলেও ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।
পরে ৬ নভেম্বর হাবের বাতিল হওয়া কমিটি আগামী বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। ‘সাধারণ হজ এজেন্সির মালিকবৃন্দ’ ব্যানারে তারা এ প্যাকেজ ঘোষণা করে। খাবার খরচ যুক্ত করে সাধারণ হজ প্যাকেজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।
পরদিন ৭ নভেম্বর ‘বৈষম্যবিরোধী হজ এজেন্সি মালিকরা’ তিনটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তাদের ঘোষণা করা প্রথম প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য ৫ লাখ ৮৫ হাজার এবং বিশেষ হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এজেন্সিগুলোর সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক বসানো হয়েছে। এতে এজেন্সি মালিকরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যান। পরে তারাও আলাদা করে প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
জানতে চাইলে কুতুব উদ্দিন নামে হজ এজেন্সির এক মালিক বলেন, এবার হজ ব্যবস্থাপনায় নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন একাধিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। আর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নতুন হওয়ার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় এক ধরনের হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে।