Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা

স্বেচ্ছায় সনদ বাতিলের আবেদনে সাধারণ ক্ষমা

মুক্তিযোদ্ধার নতুন করে তালিকা হবে না, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল হওয়ার পর প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বেচ্ছায় সনদ বাতিলের আবেদনে সাধারণ ক্ষমা

ছবি: সংগৃহীত

সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান সমুন্নত রেখে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক। তিনি বলেন, ‘কারা অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন, তারা যেন স্বেচ্ছায় সনদ বাতিল করে চলে যান। যদি যান তাহলে তারা (ইনডেমনিটি) সাধারণ ক্ষামা পাবেন। আর যদি সেটা না হয়, প্রতারণার জন্য তাদের অভিযুক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করব।

বুধবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে বিজয় দিবসের নানা কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপদেষ্টার পাশে মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল করা হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, বহু অভিযোগ আছে-মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়ে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। আমি মনে করি এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা অনেক বড় অপরাধ। অপেক্ষমাণ আদালতের আদেশে এটা যখন চিহ্নিত হবে তখন এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল হবে এবং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, অমুক্তিযোদ্ধা যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। আমরা খুব দ্রুত তাদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে যেতে পারব আশা করছি।

নীল তালিকা, লাল তালিকা, ভারতীয় তালিকাসহ নানা ধরনের মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে ফারুক-ই-আজম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনুরাগের বশে, আত্মীয়তার বশে কিংবা অন্য কোনো প্রলোভনে অনেককে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে একটু তো সময় লাগবেই। আমরা চাই, সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ন না হয়। তাদের মর্যাদা সমুন্নত রেখেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিছুটা হলেও এটা আমাদের জন্য দুরূহ কাজ। তারপরও এক্ষেত্রে সফলতা আসবে।

‘রাজাকারের তালিকা বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কোনো ফাইল নেই’ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, রাজাকারের তালিকা করতে চাইলেও করা যাবে না। যেখানে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা যাচ্ছে না, সেখানে রাজাকারের তালিকা করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। ৫০ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা এখন কোথায় কে আছে না আছে, কার কাছ থেকে বাস্তব নথি পেয়ে এই বিচার করব তা সন্ধান করা দুরূহ ব্যাপার।

তিনি বলেন, অনেক অভিযোগ আছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার না হয়েও নানাভাবে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন এবং সুবিধা নিচ্ছেন। আমরা এসব পাবলিক করব। কারণ কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পড়লে তা যাচাই করে চাকরিচ্যুতিসহ আইনের আওতায় আনতে পারব।

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স মন্ত্রণালয় থেকে ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা আছে। এর চেয়ে কম বয়সি আছেন ২ হাজার ১১১ জন। এরা তালিকা থেকে বাদ যাবেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ভাতাপ্রাপ্ত মোট বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে বীরাঙ্গনা ৪৬৪ জন। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৮৯৫ জন, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ হাজার ৩৩৩ জন এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৩৬৮ জন। সব মিলিয়ে মোট ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জন।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সর্বমোট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন। আর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা ৫৬০ জন।

লিখিত বক্তব্যে ফারুক-ই-আজম আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাথমিক ও মূল লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার। পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এবং সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পদে এ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলের সংখ্যা যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ করা হয়েছে। অমুক্তিযোদ্ধা শনাক্তকরণে অভিযোগ ফরম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করার জন্য সব মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যাদি সংগ্রহের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সংগৃহীত তথ্যাদি যাচাই-বাছাইপূর্বক একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা যাবে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্তদের সর্বমোট সংখ্যা ৮৯ হাজার ২৩৫ জন।

বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কর্মসূচি : শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা জানান, বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একইদিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী দেবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

এছাড়া শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে সব মসজিদ এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে যথাক্রমে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এলাকায় মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অপরদিকে ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এদিনে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকায় সজ্জিত হবে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী দেবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হবে।

এছাড়া দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা (চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের) আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

বিকালে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম