Logo
Logo
×

শেষ পাতা

চট্টগ্রামে সওজের ৫ হাজার টন স্ক্র্যাপ নিলাম

সন্ত্রাসীদের বাধায় দরপত্র জমা দিতে পারেনি শতাধিক বিডার

সরকারের পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা

Icon

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সন্ত্রাসীদের বাধায় দরপত্র জমা দিতে পারেনি শতাধিক বিডার

চট্টগ্রামে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাঁচ হাজার টন স্ক্র্যাপের (লোহালক্কড়) একটি বড় নিলামে অংশ নিতে পারেনি অধিকাংশ বিডার বা প্রতিষ্ঠান। সন্ত্রাসীদের বাধা, হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে তাদের ফিরে যেতে হয়েছে। শতাধিক প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও সোমবার শেষ দিনে জমা দিয়েছে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে টেন্ডার শিডিউল জমা দিয়ে পাঁচ হাজার টন স্ক্র্যাপ বাগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে জেআর ট্রেডিং নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। এভাবে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের কারণে সরকার অন্তত ৫ কোটি টাকার রাজস্ববঞ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, শওকত আজম খাজা নামে নগর বিএনপির এক নেতার অনুসারীরা সরকারি এই নিলাম নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সওজের মনসুরাবাদ কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই শতাধিক লোক অবস্থান নিয়ে তাদের নিলাম দরপত্র জমা দিতে দেননি। দরপত্র জমা দিতে আসা ঠিকাদার ও তাদের প্রতিনিধিদের বাধা দিয়েছেন। তাদের কাছে প্রশাসনও ছিল অসহায়! এমনকি দরপত্র জমা দিতে আসা একজন নিখোঁজও হন। তাকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে নাকি আত্মগোপন করেছেন তা তদন্ত করছে পুলিশ।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য তৃতীয় সেতু নির্মাণ করা হয়। এটি চালু হওয়ার পর এর পাশে এরশাদ সরকারের আমলে নির্মিত লোহা ও কাঠের সেতুটি ভেঙে ফেলা হয়। সেই সেতুর হাজার হাজার টন লোহা, পাইপসহ বিভিন্ন মালামাল এনে জমা করা হয় মনসুরাবাদ এলাকায় অবস্থিত সওজের স্টকইয়ার্ডে। ১২-১৪ বছর ধরে এসব মালামাল পড়ে থাকলেও নিলামের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২-৩ বছর আগে থেকে এসব মালামাল নিলামে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর সওজের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগ এসব স্ক্র্যাপের নিলাম দরপত্র আহ্বান করে। সূত্র জানায়, শতাধিক দরপত্র বিক্রি হয়। উন্মুক্ত এই দরপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার।

দরপত্র জমা দিতে আসা একাধিক দরপত্র গ্রহীতা (বিডার) ও তাদের প্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন, মনসুরাবাদে সওজের কার্যালয়ে সকাল থেকেই অবস্থান নেন শতাধিক লোক। তাদের অনেকেই স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং খাজার অনুসারী হিসাবে পরিচিত। তারা বিডারদের সওজ কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আটকে দেন। কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেকের দরপত্র কেড়ে নেন। এমনকি কোনো কোনো বিডারের ওপর চড়াও হন। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও এ সময় তারা পাননি। দরপত্র জমা দিতে হলে বিএনপি নেতা খাজার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন বাধাদানকারীরা।

এ অবস্থায় বেশিরভাগ বিডার দরপত্র জমা না দিয়ে ফিরে যান। নির্বাহী প্রকৌশলী, সওজ-সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রাম বরাবরে একাধিক বিডার এ বিষয়ে অভিযোগ করে চিঠি দিয়েছেন। এসএল স্টিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. লোকমান লিখিত অভিযোগে বলেছেন, তারা নিলামে অংশ নিতে ৫ হাজার টাকা দিয়ে দরপত্র কিনেছিলেন। জমাদানের শেষ দিনে যথারীতি উপস্থিত হয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নিলাম দরপত্র দাখিল করতে পারেননি। তারা এই স্ক্র্যাপ মালামালের পুনরায় নিলামের পাশাপাশি নিলাম দরপত্র দাখিলে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। মেসার্স বাংলা মোটর নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকও অভিযোগ করেছেন তারা সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে নিলাম দরপত্র জমা দিতে পারেননি।

একাধিক বিডার বলেন, নগর বিএনপি নেতা শওকত আজম খাজার অনুসারীরাই দরপত্র জমাদানে বাধা সৃষ্টি করেছেন। যে কারণে শতাধিক বিডার দরপত্র কিনলেও জমা দিতে পেরেছেন ঢাকার মাত্র ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রতি কেজি স্ক্র্যাপ ৩৯ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন জেআর ট্রেডিং নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান।

তবে শওকত আজম খাজা যুগান্তরকে বলেছেন, সওজের স্ক্র্যাপ নিলামে বাধা প্রদানের অভিযোগ সত্য নয়। মূলত ওই নিলামে যেসব শর্ত ছিল তা বেশিরভাগ বিডার বা দরপত্র গ্রহীতা পূরণ করতে পারেননি। একক দরপত্রে ২০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। চট্টগ্রামে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল না। ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিতে পেরেছে। অংশ নিতে না পারা বিডাররা বলেছেন, প্রতি কেজি স্ক্র্যাপ অন্তত ৪৮-৫০ টাকা দর পাওয়া যেত। নিলাম নিয়ন্ত্রণ করার কারণে মাত্র ৩৯ টাকা সর্বোচ্চ দর জমা পড়েছে। এতে করে ৫ হাজার টন স্ক্র্যাপে সরকার অন্তত ৫ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে।

সওজের সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ্র দাশ যুগান্তরকে বলেন, দরপত্র জমাদানের দিন বাইরে বিডারদের বাধা দেওয়া হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে দরপত্র জমাদানের নির্ধারিত সময় শেষে দেখা গেছে, ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান এমন অভিযোগ এনে পুনঃনিলাম আহ্বানের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দরপত্র জমাদানের দিন সওজ কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কাউকে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে রাতে অটবি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দরপত্র জমা দিতে আসা তাদের একজন প্রতিনিধিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডির তদন্ত চলছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম