Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শুরুতে দায়িত্বহীনতায় মাঝপথে নকশা বদল

দুই বছরের প্রকল্প যাচ্ছে ৬ বছরে

হামিদ-উজ-জামান

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুই বছরের প্রকল্প যাচ্ছে ৬ বছরে

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি শুরুতে যেনতেনভাবে নেওয়া হয়। এর অনেক কিছুই শুরুতে প্রকল্পভুক্ত করা হয়নি। ফলে মাঝপথে নকশা বদল করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে সময় সময় নতুন কাজও যুক্ত হয়েছে। এসব কারণে দুই বছরের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগছে ছয় বছর। মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় বাড়তি খরচ যাচ্ছে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা।

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাব নিয়ে গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, দায়িত্বহীনতা ও জবাবদিহিতা না থাকার খেসারত দিতে হচ্ছে এই প্রকল্পে। ঠিকমতো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই সম্ভবত প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ কারণে বাস্তবায়ন পর্যায়ে গিয়ে ধাপে ধাপে মনে হয়েছে নকশাটা বদলানো দরকার। কিংবা এখনো এটা করলে ভালো হয়, ওখানে ওটা করা দরকার। শুরুতেই কেন এসব চিন্তা করা হয়নি। সেটিই বড় প্রশ্ন। এখন পরিকল্পনা কমিশনের উচিত ছিল কঠোরভাবে পর্যালোচনা করে দেখা। এক্ষেত্রে মূলত দায়ী হবে যারা প্রকল্প তৈরির সময় যুক্ত ছিলেন। তাদের খুঁজে বের করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে একই ঘটনা বারবার ঘটত না।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কবির আহামদ পিইসি সভায় বলেন, সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবাকে আধুনিক ও উন্নত করতে চায় সরকার। এজন্য এটির পরিসর বাড়াতে বিদ্যমান চারতলাবিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ভবনটি ১৬ তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে দুই বছরে বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা ছিল। এজন্য মূল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১২ মার্চ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এরপর এটির ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন আরও সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালে শেষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

শুরুতে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়নের মাঝপথে হাসপাতালটিকে আধুনিক হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য নকশায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সে অনুযায়ী পরে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৪২৮ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন অনুমোদন করেন। কিন্তু এতেও শেষ হয়নি বাস্তবায়ন কাজ। বর্তমানে কিছু নতুন অঙ্গের সংযোজন ও প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ৪৬৬ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

সূত্র জানায়, গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৬৫ কোটি টাকা বা ৫৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। তিনি প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবের কারণ সম্পর্কে তুলে ধরেন। এ সময় বলেন, হাসপাতালে রোগীদের সেবা নির্বিঘ্ন করার জন্য অষ্টম পিএসসি (প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি) সভার সিদ্ধান্তের জন্য ১৮০০ কেজির ২টি নতুন লিফট সংযোজন এবং সংশ্লিষ্ট সিভিল কাজের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে আগে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মূল অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অনাবাসিক ভবন নির্মাণ কোডটির পরিবর্তে ভুলে আবাসিক ভবন কোড লেখা হয়েছিল। প্রস্তাবিত ডিপিপিতে ভুলটি সংশোধন করে অনাবাসিক করা হয়েছে। অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হাসপাতাল ভবনের দক্ষিণ-পূর্বদিকের খালি অংশের লিফট লবির জন্য প্রতিটি ফ্লোরে এরিয়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধিত নকশায় পোর্চ ও পোর্চের ওপর ক্যান্টিন নির্মাণের সংস্থান থাকায় ফ্লোর এরিয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালের অত্যাধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতিগুলোর প্রতিটির জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রয়োজন। যন্ত্রপাতিগুলোর উপযোগী ক্যামেরা সিস্টেম, সাউন্ড সিস্টেম, এয়ারকন্ডিশনিং ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজগুলো শেষ করার জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। পিএসসি সভার সিদ্ধান্তে, প্রতিটি ফ্লোরে ফলস সিলিং স্থাপন এবং কেবিনে মার্বেল স্থাপন, অগ্নিনির্বাপণের পানির জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে জলাধারের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সিভিল অবকাঠামোর নকশা পরিবর্তন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালটি আধুনিক সেবা দেওয়ার জন্য মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, মডিউলার কিচেন, অন্যান্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি স্থাপন, জেব্রা ব্লাইন্ড, পোর্চ ও সংশ্লিষ্ট আইটেম, এয়ার হ্যান্ডলিং ইউনিট, স্টিল স্টেয়ারকেস, ভিআরএফ, চিলার, মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন কাজের অবশিষ্ট ও অতিরিক্ত কাজ, মেডিকেল যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য বিশেষ বৈদ্যুতিক কাজ এবং ৮০০ কেজির ২টি লিফট সংযোজন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটিতে ৭০ শতাংশ সরকারি চাকরিজীবী এবং ৩০ শতাংশ সাধারণ মানুষের সেবার জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম