গোলটেবিল বৈঠকে উপদেষ্টা হাসান আরিফ
থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/12/03/hasan-arif-674e26adb525b.jpg)
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেছেন, এখন পর্যন্ত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল তৈরিতে ২৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। একটি কি-নোট পেপারে দেখলাম দুর্নীতি না হলে এত টাকা খরচ হওয়ার কথা না। নিশ্চয়ই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
সোমবার রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) আয়োজিত ‘তৃতীয় টার্মিনাল : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
হাসান আরিফ বলেন, সবকিছুতেই সংস্কারের একটি বিষয় আসছে। দুদকও সংস্কার করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের ১৭ বছরে যা যা ঘটেছে, সেগুলোর শ্বেতপত্র আসছে। সেভাবে বিমানেরও শ্বেতপত্র আসবে। শ্বেতপত্র মানে শুধু অভিযোগই আনা নয়, এটি আত্মশুদ্ধির একটি প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মতো সক্ষমতা আছে কী নেই, এটা প্রাথমিকভাবে পারসেপশনের একটি বিষয়। তার কারণ, বিমানের এতদিন যে সার্ভিস আমরা পেয়ে আসছি সেটা মনঃপূত নয়। একটি কমন অভিযোগ, আমি টিকিট পাই না। কিন্তু উঠে দেখি পুরো বিমান ফাঁকা। বিমান যেহেতু এখন আমার দায়িত্বে, সক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেগুলো নিয়ে রোববার আলোচনা করেছি। শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না, আমি এগুলোর ইনসপেকশনে যাই।
গোলটেবিল বৈঠকে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান কি-নোট পেপারে বলেন, থার্ড টার্মিনাল ঘিরে বিগত দেড় দশকজুড়ে আমরা একাধারে সম্ভাবনা বা রঙিন স্বপ্নের বয়ান শুনে আসছি। আমরা হতাশাবাদী হতে চাই না, কিন্তু বাস্তবে থার্ড টার্মিনাল ঘিরে নানা অনিয়ম আর সমস্যা নিয়ে আমরা কি আশাবাদী হতে পারি? টার্মিনালটির কাজ শেষ হতে হতে নির্মাণ ব্যয় ২৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে একাধিক কোম্পানিকে দেওয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয় বরং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙা সম্ভব হলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের সব টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য বেবিচক কাজ করছে। এসব টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এখন শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে একটি স্বপ্ন। তবে এজন্য বেবিচক বসে নেই। সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও রাজধানীর জনবসতির ভেতর বিমানবন্দর নেই। সেখানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তথা তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সময় তা বিবেচনা করা হয়নি। এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য ৫৪ বছরেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্জন শূন্য। এয়ারলাইন্সগুলোর বিমানের গ্রাহক, তাদের সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বাংলাদেশের যাত্রী পরিবহণ করে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সন্তুষ্ট নয়। তারা জানিয়েছে, বিশ্বে অন্যান্য যে কোনো দেশের তুলনায় শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি। শাহজালাল বিমানবন্দরকে এভিয়েশন হাব করতে হবে।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের জিএসএ রিদম গ্রুপের হেড অব বিজনেস মাসুদুজ্জামান বলেন, বিমান বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান। আমরা চাই বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করুক। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো তাদের কাজের প্রক্রিয়া দীর্ঘ। বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগে বিমান থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার অনুমতি নিতে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের চার মাসের বেশি সময় ঘুরতে হয়েছে।
বক্তারা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মান উন্নয়নে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের দাবি জানান। এ বিষয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সেবায় প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ জরুরি। বর্তমান মনোপলি ব্যবস্থার পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দক্ষ অপারেটর নিয়োগের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।