Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ট্রাইব্যুনালস আইন আন্তর্জাতিক মানের : প্রসিকিউটর

মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে বিদেশিদেরও বিচার করা যাবে

Icon

আলমগীর মিয়া

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে বিদেশিদেরও বিচার করা যাবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ সংশোধন করায় এটি ‘আন্তর্জাতিক মানের’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম। সোমবার ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

গত জুলাই-আগস্টে সরকার পতন আন্দোলনে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালে বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ‘ন্যায়বিচারের’ স্বার্থে ‘আন্তর্জাতিক মান’ বজায় রেখে এ আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। এ আইনে ‘ডিফেন্স কাউন্সিলের’ জন্য কোনো সেকশন ছিল না। এখন ডিফেন্স রাইটসের ব্যাপারে সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। সেকশন ১৭-তে আগে আসামিরা ‘স্টেটমেন্ট’ দেওয়ার সুযোগ পেতেন, এখন আরও বিশদ আকারে তাদের কথাগুলো বলতে পারবেন। আগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে এ আইনের অপরাধ করলে তার বিচার করা যেত; এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কিংবা বিদেশে থেকেও এ আইনের অপরাধ করলে তার বিচার করা যাবে। আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে যদি কোনো বিদেশিও এ অপরাধ করে থাকে তার বিচার করা যাবে-যোগ করেন তিনি।

তামিম বলেন, আগের আইনে ‘নির্যাতন’, ‘অপহরণ’ ও ‘বন্দি’ ছিল; আন্তর্জাতিক আইনে সংযোজন হয়েছে ‘জোরপূর্বক গুম’। আপিলের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ট্রাইব্যুনালের অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে, যেমন আদালত অবমাননার ক্ষেত্রে কেউ চাইলে আপিল বিভাগে যেতে পারবেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আগের আইনে ছিল ‘সশস্ত্র বাহিনীর’ কথা। এখন যুক্ত হয়েছে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে তিন বাহিনী এবং পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থাসহ আনসার বাহিনীকেও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। কোন কোন ধারার কারণে এটিকে আন্তর্জাতিক মানের বলা হচ্ছে-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেকশন ২, ৪, ১২, ১৭, ২০, এই ধারাগুলোর কারণে আন্তর্জাতিক মানের বলা হয়েছে। সেকশন ১২-তে ডিফেন্স কাউন্সিল, সেকশন-১৭ তে অভিযুক্তদের অধিকার দেওয়া হয়। এছাড়া সেকশন ৯-এ শুনানির ব্যাপারে আসামিদের তিন সপ্তাহের পরিবর্তে এখন ছয় সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। আসামি পক্ষ আগে অনুমতি নিয়ে সীমিত আকারে আদালতে নথি দিতে পারত। এখন তারা চাইলে অনুমতি নিয়ে যে কোনো সময় নথিপত্র জমা দিতে পারবে।

অভিযোগ গঠন শুনানি প্রসঙ্গে তামিম বলেন, আগে অভিযোগ শুনানির সময় সাক্ষীদের নাম দিতে হতো। এখন আসামি পক্ষ চাইলে বিচারের যে কোনো সময় সাক্ষীর নাম দিতে পারবে। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলাগুলো নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এই সংশোধনী ২০০৯ সাল থেকে কার্যকর বলে ধরা হবে।

এদিকে, প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে জানান, ট্রাইব্যুনাল আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধন, প্রতিস্থাপন ও সংযোজন করা হয়েছে। ধারা ১-এ আগে বিচারের এখতিয়ার ছিল শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এখন এই এখতিয়ার বাংলাদেশের বাইরেও রয়েছে। ধারা ২-এর ‘ক্লজ এ-এ’এর বদলে নতুন রূপে ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’ বলতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড আনসার বা আইনের দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোনো ফোর্সকে বুঝাবে।

ধারা ৩ (২) এর ‘ক্লজ-এ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে-কোনো জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর, যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক গুম, মানব পাচার, যৌন দাসত্ব, যৌন ব্যবসায় বাধ্য করা, জোরপূর্বক সন্তানধারণ ও জোরপূর্বক নির্বীজন বা খোঁজাকরণ।

গণহত্যার অর্থ থেকে ‘রাজনৈতিক গোষ্ঠী’র পরিবর্তে এই ধারার ২ এর (জি)-তে ‘উসকানি’ শব্দটি যুক্ত হয়েছে। ধারা ৪-এ-তে ‘অপরাধের দায়’ এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নতুন ধারা ৯-এ যুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছা করলে অডিও ভিজ্যুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করতে পারবেন। এর জন্য নতুন ধারা ১০-বি যুক্ত হয়েছে। সেখানে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ধারা ১১এ-তে নতুন উপধারা ৭ ও ৮ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, অনিবার্য পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং সাক্ষীদের ভার্চুয়াল হেয়ারিং নিতে পারবেন। ধারা ১৯(১) এর পরিবর্তে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে অডিও, ভিডিও, ডিভিডি, সিসিটিভি, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার অথবা অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেগুলো ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা যাবে। ধারা ২১-তে আসামি শুধু ট্রাইব্যুনাল অবমাননার শাস্তির অন্তর্বর্তী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। এ ধারায় আপিল বিভাগে আবেদন আটকে থাকলে ট্রাইব্যুনাল মামলা চালিয়ে যাবে, তাও বলা হয়েছে। প্রসিকিউটর বিএম সুলতান যুগান্তরকে বলেন, গণহত্যা’র অর্থ থেকে ‘রাজনৈতিক গোষ্ঠী’র পরিবর্তে ‘উসকানি’ শব্দ যুক্ত হয়েছে বটে, তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে কোনো সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের বিচার করতে পারবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম