মিকাইল লুই (৯৭) ও আলিক আথানেজ (৯০) অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করলেও দারুণ ব্যাটিংয়ে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেন জাস্টিন গ্রেভস (১১৫*)। তার দারুণ ইনিংসে নয় উইকেট হারিয়ে ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলায় দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। ৪২/২ স্কোর নিয়ে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ভালোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। শাহাদাত হোসেনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন কেমার রোচ। ফিফটি (৫০) করে ফেরেন মুমিনুল, ৪০ রানে আউট হন লিটন দাসও। আবার বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। রোববার তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশন শেষে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে ১৬৫ রান তুলতে পারে। মেহেদী হাসান মিরাজ ২২ এবং জাকির আলী ৫ রানে ব্যাট করছিলেন। 

আগের দিন বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার পর সতর্কতায় শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। দশম ওভারে উদ্বোধনী জুটি থামে ২০ রানে। সিলসের বল স্টাম্পে টেনে আনেন জাকির (৩৫ বলে ১৪)। পরের ওভারেই আলজারি জোসেফের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ধরা পড়েন আরেক ওপেনার জয় (৩৩ বলে ৪)। ২১ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় দিন শেষে আরও ২১ রান যোগ করেন মুমিনুল ও মাহমুদুল। কাল তৃতীয় দিনেও ভালো শুরু করেন তারা। ৫০ মিনিট নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দেন। তবে শাহাদাতের প্রতিরোধ ভাঙেন কেমার রোচ। অফ স্টাম্প ঘেঁষে করা ফুল লেংথ ডেলিভারির লাইনে পুরোপুরি যেতে পারেননি শাহাদাত। পা বাড়িয়ে খেলার চেষ্টাতে তাই সফল হননি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে স্লিপে, কেভাম হজের হাতে। ভাঙে ১২৯ বলে গড়া ৪৫ রানের জুটি। ৭১ বলে এক চারে ১৮ রান করে হতাশা নিয়ে ফেরেন শাহাদাত। এরপর ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি করেই বিদায় নেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দশ হাজার রান পূর্ণ করা মুমিনুল। সাবলীল খেলতে থাকা লিটনও এর পরপর সাঝঘরে ফিরলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকেই জাকেরকে নিয়ে দলকে টানছিলেন অধিনায়ক। 

তার আগে পাঁচ উইকেটে ২৫০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা ক্যারিবীয়দের বড় স্কোরে নিয়ে যান জাস্টিন গ্রেভস। তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা অলরাউন্ডার উপহার দেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি। ২০৬ বলে ১১৫ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই অলরাউন্ডার। সেখানে বাউন্ডারি ছিল মাত্র চারটি। অষ্টম উইকেটে ১৪০ রানের জুটি গড়েন তিনি কেমার রোচের সঙ্গে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যা বাংলাদেশের রেকর্ড। ২৫২ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে ক্যারিয়ারসেরা ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন রোচ। অথচ দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য আশা জাগানিয়া। দ্বিতীয় নতুন বল তখনো তরতাজা। দিনের প্রথম ওভারেই জশুয়া ডি সিলভাকে বিদায় করেন হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশের হয়ে এক পঞ্জিকাবর্ষে ২৪ উইকেট নিয়ে সফলতম পেসারের রেকর্ড গড়েন তিনি। নিজের পরের ওভারে এসেই ফেরান আলজেরি জোসেফকে। তবে এরপর উইকেট নিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৮ ওভার পর্যন্ত। চা-বিরতির একটু আগে রোচকে ৪৭ রানে বোল্ড করে ১৪০ রানের জুটি থামান হাসান মাহমুদ। পরে দশে নেমে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৮ রান করেন জেডেন সিলস। শেষ জুটিতে শামার জোসেফকে নিয়ে দলকে সাড়ে চারশ রানে নিয়ে যান গ্রেভস। তিনটি উইকেট নেন হাসান, দুটি করে উইকেট পান মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদ, একটি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিস প্রথম ইনিংস ৪৫০/৯ (ডিক্লে.) ১৪৪.১ ওভারে (মিকাইল লুই ৯৭, আলিক আথানেজ ৯০, গ্রেভস ১১৫*, কিমার রোচ ৪৭। হাসান মাহমুদ ৩/৮৭, তাসকিন আহমেদ ২/৭৬, তাইজুল ইসলাম ১/১১১, মিরাজ ২/৯৯)। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ১৬৫/৫, ৬৮ ওভারে (মাহমুদুল হাসান ৫, জাকির হাসান ১৫, মুমিনুল হক ৫০, শাহাদাত হোসেন ১৮, লিটন দাস ৪০, মেহেদী হাসান মিরাজ ২২*, জাকের আলী ৫*। কেমার রোচ ১/১৭, আলজারি জোসেফ ১/৩৬, জেডেন সিলস ২/৩১, শামার জোসেফ ১/৪৬)।