Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান

বাবার দেওয়া নাম পেলেও স্পর্শটুকু পায়নি রোজা

Icon

অনিকেত মাসুদ, বরিশাল

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাবার দেওয়া নাম পেলেও স্পর্শটুকু পায়নি রোজা

বাবার ঠিক করে দেওয়া নাম পেলেও, তার (বাবা) আঙুলের আদুরে স্পর্শ পায়নি নবজাতক রোজা (১৯ দিন)। আর কখনো সেটা পাওয়ার সৌভাগ্যও তার হবে না। কারণ, জন্মের ৪ মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থানে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হয়েছেন বাবা আলামিন রনি (২৮)।

আলামিন মারা যাওয়ার আগেই তার অনাগত সন্তানের নাম ঠিক করেছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা জন্য টাকা-পয়সা জমানোর পাশাপাশি ছোট্ট ছোট্ট জামা-প্যান্টও কিনে রেখেছিলেন ওয়ার্কশপের দিনমজুর আলামিন। কিন্তু নিজের শিশুকে একনজর দেখার আগেই তিনি বিদায় নিয়েছেন নশ্বর পৃথিবী থেকে। প্রথম সন্তান রোজার নিষ্পাপ মুখের নীরবতায় বাবাকে হারানোর কষ্ট ফুটে না উঠলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শংকায় রয়েছেন মা মিম ইসলাম।

শনিবার বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ৭৯ শহিদ পরিবারের মধ্যে সহায়তার চেক নিতে এসে এ প্রতিবেদককে এমন কথা জানান মিম। জেলার বানারীপাড়ার পশ্চিম চাখারের বাসিন্দা মিম আক্তার বলেন, ‘১৯ জুলাই বিকালে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে মিমের বাবা আলামিন রনি গুলিবিদ্ধ হন।

রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহিদ হন। তখন আমি (মিম) ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। মাত্র ১৯ দিন আগে রোজার জন্ম হয়েছে। জন্মের পর রোজা বাবাকে দেখতে পেল না, বাবা বলে ডাকতে পারল না, এই কষ্ট কীভাবে সইবে? রোজাকে যারা বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করল আমি তাদের বিচার চাই।’

মিম আক্তার আরও বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো দলের রাজনীতি করত না। খেটেখাওয়া মানুষ ছিলেন তিনি, তার অল্প আয়ে সংসার কোনোমতে চলছিল। কিন্তু এখন চরম অর্থসংকটে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই সন্তানকে মানুষ হিসাবে বড় করতে সব ধরনের সহায়তা সরকারের কাছে চাই।’

রোজার মতো বাবাই নয়, এমনিভাবে কেউ হারিয়েছে স্বামী, একমাত্র সন্তান বা ভাইকেও। একমাত্র সন্তান হারিয়ে নিঃস্ব সাবেক সেনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম (৫৯) বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ইমরান হোসেন (৩৪) ১৯ জুলাই ঢাকার গুলশানে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে।

ইমরান বরিশালের গৌরনদীর আগরপুর কলেজের ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকার একটি হাউজিং কোম্পানিতে চাকরি করে সে পরিবারের খরচ বহন করত। এখন আমার ছেলের স্ত্রী শান্তা ও সন্তান ইয়াজ খলিফা (২৩ মাস) আমার সঙ্গেই আছে। আমি নিজেই বেকার, তারপর এদেরও খরচ আমাকেই বহন করতে হচ্ছে। দুই পরিবার নিয়ে চরম অর্থ সংকটে দিন কাটাচ্ছি। আমার সম্পদ বলতেই ছিল সন্তান ইমরান, তাকে হারিয়ে আজ নিঃস্ব। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই। ইমরান গৌরনদীর কালনা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত এমদাদুল হকের (২৭) বড় ভাই মো. হাসান বলেন, ছোট ভাই ইমদাদুল ঢাকায় ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার চালিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খরচ বহন করতেন। আমি (হাসান) ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। জুলাই অভ্যুত্থানে চলাকালে ঢাকার বাড্ডায় ২০ জুলাই গুলিতে ঘটনাস্থলে শহিদ হয় ইমদাদ।

এরপর আমাকেও (হাসান) ঢাকা থেকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে বরিশালে নিয়ে আসেন বাবা-মা। তাই বর্তমানে চরম অর্থসংকটে ভুগছি। স্থানীয়দের সহায়তার পাশাপাশি রাজনৈতিক দুটি দল থেকে কিছু অর্থ সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। নিহত ইমদাদ পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ধাওয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ টিটু হাওলাদারের স্ত্রী আয়শা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাকার ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসাবে চাকরি করে সংসার চালাতেন। তার আয়ে আমাদের কোনোমতে দিন কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ১৯ জুলাই ধানমন্ডিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এরপর ২০ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর তার (টিটু) বৃদ্ধ বাবা-মাসহ আমার (আয়েশা) তিন সন্তান নিয়ে চরম অর্থসংকটে দিন কাটাচ্ছি। দুটি রাজনৈতিক দল থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। টিটু বরগুনার বেতাগীর হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম