Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ঢামেক হাসপাতালে সক্রিয় প্রতারক

রোগীর স্বজন সেজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘোরে অপরাধীচক্র

প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ * রোগী ভাগিয়ে নেয় প্রাইভেট ক্লিনিকে

ইকবাল হাসান ফরিদ

ইকবাল হাসান ফরিদ

প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রোগীর স্বজন সেজে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘোরে অপরাধীচক্র

ফাইল ছবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অপরাধী চক্র। চক্রের সদস্যরা কখনও রোগী, কখনও রোগীর স্বজন সেজে হাসপাতালে ঢোকে। এরা নির্বিঘ্নে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে নানা কৌশলে রোগী এবং স্বজনদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। কেউ কেউ রোগী ভাগানোর সঙ্গেও জড়িত। মাঝেমধ্যে দু-একজন আটক হলেও কৌশলের কারণে বেশিরভাগই রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরেজমিন ঢামেক ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ চুরি হচ্ছে। চোরেরা জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসক দেখানোর টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে। এরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে চুরি এবং প্রতারণার কাজে জড়িত। হাসপাতালে মোবাইল চোর চক্রে জড়িত রয়েছে অন্তত ২০ জন। তাদের চতুর্থ শ্রেণির কোনো কোনো কর্মচারীও সহযোগিতা করে থাকেন।

সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডে এক রোগীর স্বজন সাদির মোহাম্মদের একটি মোবাইল ফোন চুরি করে পালানোর সময় তিনি ফয়সাল নামে এক চোরকে হাতেনাতে ধরেন। পরে তাকে গণধোলাই দিয়ে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও ফয়সাল মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে আটক হয়েছিল। ফয়সালকে আটকের খবর পেয়ে ছয়-সাত ভুক্তভোগী হাজির হন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পে। তারা প্রত্যেকেই জানান, তাদের মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে এই হাসপাতাল থেকে।

৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন যুগান্তরকে বলেন, রোববার ভোরে ওয়ার্ড থেকে তার একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালের কর্মচারী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে চোরদের যোগসাজশ রয়েছে। নতুবা চোরেরা কিভাবে হাসপাতালে ঢুকে একের পর এক মোবাইল চুরি করে যাচ্ছে-প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ঢামেকের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডের পাশে সিঁড়ির নিচে রেখে চিকিৎসা নেওয়া এক রোগীর স্বজন যুগান্তরকে বলেন, সোমবার সকালে তার দুটি মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। ৮০২ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক ভুক্তভোগী জানান, তারও একটি স্মার্টফোন চুরি হয়েছে এখান থেকে। তারা মোবাইল চোর ধরার খবর পেয়ে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। তবে তাদের ফোন উদ্ধার করা যায়নি।

রোববার চিকিৎসকের অ্যাপ্রন পরা অবস্থায় এক নারী প্রতারককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ৯ জুন মোবাইল চোর চক্রের ৫ সদস্য মিন্টু, মাইনুল, সজিব, স্বপন ও আজিমকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল একটি আইফোন চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জয়নাল নামে এক চোরকে আটক করা হয়। এরা ছাড়াও বহু অপরাধীকে ঢামেক কর্তৃপক্ষ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

ঢামেকে নিরাপত্তার স্বার্থে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবি ডিউটি পালন করছে। এত নিরাপত্তার পরও কিভাবে চোর এবং প্রতারক হাসপাতালের ভেতরে ঢুকছে এ বিষয়ে একজন আনসার সদস্য যুগান্তরকে বলেন, অপরাধী চক্র কখনো রোগীর স্বজন সেজে, আবার কখনো রোগী সেজে টিকিট নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করেন। এরপর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগী এবং স্বজনদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ চুরি করে। কেউ কেউ দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের এ হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিকালে জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট নিয়ে চক্রের সদস্যরা হাসপাতালে ঢুকে। হাতেনাতে না ধরতে পারলে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ এরা এক ধরনের লিগ্যালিটি নিয়েই হাসপাতালে প্রবেশ করে।

ঢামেক সূত্র জানায়, রোগী ভাগানোসহ নানা প্রতারণা বন্ধে বেসরকারি ক্লিনিক ও ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশ নিষেধ করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। এরপরও কোম্পানির প্রতিনিধিরা নানান কৌশলে হাসপাতালে ঢুকছে।

ঢামেক হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঢামেক ঘিরে মোবাইল চোর চক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা রোগীর স্বজন সেজে ভেতরে ঢোকে। যে কারণে তাদের সব সময় শনাক্ত করা যায় না। তবে প্রায়ই আমরা মোবাইল ফোন চোরকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করি। তিনি বলেন, আমরা চলতি বছরে এ পর্যন্ত শতাধিক অপরাধীকে ধরে পুলিশে দিয়েছি।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, হাসপাতালে কোনো অপরাধী আটক হলে তাকে আমরা শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করি। অনেক সময় কেউ বাদী হয়ে মামলা দিতে চান না। যে কারণে নানা ফাঁকফোঁকরে বেরিয়ে আসে অপরাধীরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম