স্থিতিশীলতার স্বার্থে দ্রুত নির্বাচনের দাবি মির্জা ফখরুলের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সংগৃহীত
দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই আবারও দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সন্দেহ কিন্তু আপনাদের (অন্তর্র্বর্তী সরকার) ওপর আসতে শুরু করেছে। আমরা চাই, সরকার সাফল্য অর্জন করুক, তাদের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য। তারা ব্যর্থ হলে আমরা ব্যর্থ হব। আপনারা বলেন, নির্বাচন নির্বাচন করি। আরে নির্বাচন নির্বাচন করি তো জাতির স্বার্থে, বিএনপির স্বার্থে করছি না। আমরা চাই না, শেখ হাসিনা আবার ফিরে আসুক। আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আবার ফিরে আসুক। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনের কথা বলছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রাজনীতিবিদরা একটু বয়স্ক, প্রাজ্ঞ; সেজন্যই বলছি নির্বাচন দ্রুত করুন। কেন বলছি? বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য? না। নির্বাচন দ্রুত না হলে সমস্যাগুলো বাড়বে, অন্যান্য সমস্যা বাড়বে। এখন যারা গণতন্ত্রকে ধবংস করতে চায়, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে চায় তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেখুন না কত সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন দেশে সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। ফ্যাক্টরি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, যা দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) কিছুই করতে পারছেন না। আজকে যদি একটা নির্বাচিত সরকার থাকত, তার পেছনে জনগণ থাকত, তাহলে এটা এত সহজ ছিল? তারপরেও আমরাই যতটুকু বন্ধ করার বন্ধ করতে পেরেছি, আমাদের কর্মীরা গিয়ে ওই সব সমাধান করেছে।’
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মহাখালীতে রেলপথ অবরোধের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তিতুমীর কলেজের ছাত্ররা স্ট্রাইক করেছে। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানত না এরকম হতে পারে, তাহলে কেন আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না।
দেশের জনগণ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আসলে এই সরকার এখনো স্ট্যাবল হতে পারেনি। আমরা যেটা বারবার বলে আসছি, এসব আপনাদের কাজ না। আপনারা দ্রুত একটা নির্বাচন দেন। তাদের কাজ তারা করুক, রাজনীতিবিদরা তাদের কাজ করুক। আমরা তো সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে দিয়েছি। ওখান থেকে কোনটা কোনটা আপনারা নেবেন, কোনটা কোনটা নেবেন না। কিন্তু আসল জিনিস কোথায় আছে? নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করে একটা দ্রুত ব্যবস্থা নিন। একথা তো বলিনি, এত তারিখের মধ্যে দিন, অতো তারিখের মধ্যে দিন। আমরা চেয়েছি রোডম্যাপ। কবে কি করবেন আপনারা জানান। এটা আমরা জানাতে তো পারব না। সেটা জানালে তো মানুষের মধ্যে আস্থা আসবে যে, এত তারিখে নির্বাচন হবে। মানুষ তো নির্বাচন চায়।
বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে সরকারে যারা আছেন তারা অনেক সময় অনেক কথা বলছেন, কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। ফোকাস এক জায়গায় করুন। সেই ফোকাসটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে ঠিক করে নির্বাচনের দিকে যান। বাকিগুলো যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে তারা করবে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, নির্বাচিত হয়ে এলে আমরা একা দেশ চালাব না। আমরা একটা জাতীয় সরকার গঠন করে যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন তাদের নিয়ে দেশ চালাব। সমস্যাটা কোথায়, সন্দেহটা কোথায়? সন্দেহ কিন্তু আপনাদের মধ্যে আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, একটা টকশোতে এমনভাবে কথা বলা হচ্ছে তারা এখন বলতে শুরু করে দিয়েছেন যে, এখন ভিন্ন দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আছে অন্যদিকে যাওয়ার। সেজন্যই আমরা চাই, আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) সফল হোন। প্রথম দিন থেকে বলেছি, সরকারের সাফল্য মানে আমাদের সাফল্য, সরকারের সাফল্য মানে জনগণের সাফল্য, গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য। তারা যদি ফেল করে তাহলে আমরা ফেল করব। আমরা চাই না হাসিনা আবার ফিরে আসুক, আমরা চাই না, আওয়ামী লীগের ওই দুঃশাসন আবারে ফিরে আসুক। আপনাদেরকে এটুকু বলতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় বাংলাদেশের ভালো করার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থীদের অবরোধে দুর্ভোগ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছেলেদের ব্লকেডের খবর টেলিভিশনে দেখেছি। দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় যে সাধারণ মানুষ কথাবার্তাগুলো বলছে তা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। রিকশা চালাতে পারে না, সারা দিন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় ৪ ঘণ্টা ধরে আটকে থাকে। আমার গাড়িতে লাউসহ সবকিছু পড়ে আছে এসব পচে যাবে, নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য কি আমরা আন্দোলন করেছিলাম-এ কথাগুলো আসছে।
তিনি বলেন, আমাদের যারা শত্রু, এই ফ্যাসিবাদীরা এই সুযোগগুলো নেবে। এতদিন যে ফ্যাসিস্টরা নির্যাতন-নিপীড়ন করল, পায়ের নিচে রেখে দিল তখন কিন্তু কেউ কথা বলল না। জিজ্ঞাসা করলে বলে তখন কথা বলার সুযোগ ছিল না। এখন সুযোগ দিচ্ছে, আমরা বলছি। এটা থেকে জাতিকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় শহিদ জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ করে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন-অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ, এমবিএ অ্যাসোসিয়েশনের সৈয়দ আলমগীর, শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, চিকিৎসক অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, অধ্যাপক হারুন আল রশীদ, ডা. রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শামসুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।