Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ভারতের পানি ও অতিবৃষ্টির ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি

দুই হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

বড় অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে * সর্বশেষ বন্যায় মারা গেছেন ৭১ জন, বাস্তুচ্যুত ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুই হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প

ভারতের বাঁধ উপচে এবং অতিবৃষ্টির কারণে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। এ অবস্থায় মানুষ ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নেওয়া হচ্ছে একটি নতুন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে বড় অঙ্কের ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি ইমার্জেন্সি প্রিপারেডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট (বি-স্ট্রং) নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬০ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তবে এটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্ত না থাকায় অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ করা যাচ্ছে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি এডিপিতে যুক্ত করতে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব। গত ১৪ নভেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এডিপিতে যুক্ত না থাকলে ঋণ চুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই জনস্বার্থে নতুন এ প্রকল্পের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় এডিপিতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। কেননা এ প্রকল্পে সহজ শর্তে দেওয়া বিশ্বব্যাংকের ঋণ রয়েছে। আমাদের এই মুহূর্তে ডলারের প্রয়োজন। পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো জরুরি। সূত্র জানায়, অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায় বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এটি বর্তমানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নেই। কিন্তু সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের জন্য কার্যক্রম বিভাগের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রোগ্রামিং কমিটির সুপারিশ গ্রহণের বিধান রয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যেই এই কমিটির সভাও ডাকা হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করতে এডিপিতে যুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, গত ২১ আগস্ট ভারতের ত্রিপুরায় একটি বাঁধ উপচে পড়া পানির প্রবাহের সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এ সময় ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলা এবং ৫২৮টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার ঘটনার মধ্যে একটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় হঠাৎ করে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর উপচানো পানির কারণে দেশে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া ভারতের ত্রিপুরার ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়াও এবারের বন্যার জন্য দায়ী। ভারতীয় গণমাধ্যম এ খবর দিলেও পরে ভারত সরকার তা অস্বীকার করে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার বন্যা আক্রান্ত বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, কোনো প্রকার পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ডুম্বুর বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ায় এ রকম ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। এ কারণে এ বন্যায় গত ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হতাহতের সংবাদ অনুসারে মৃতদের মধ্যে ৪৫ জন পুরুষ, ১৯ জন শিশু এবং মহিলা রয়েছেন ৭ জন। ফেনীতে সর্বোচ্চ ২৮ জন মারা গেছেন। এছাড়া কুমিল্লায় ১৯ জন, নোয়াখালীতে ১১ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন এবং কক্সবাজারে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বন্যায় মোট মৃতের সংখ্যা ৭১-এ দাঁড়িয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) তথ্য মতে, দেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি মানুষ বন্যা আক্রান্ত কমিউনিটিগুলোতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের এ বিধ্বংসী বন্যার কারণে ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন। সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে হচ্ছে-নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং চট্টগ্রাম। বন্যায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষিক্ষেত্র এবং মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় যাতায়াত বা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই দুর্যোগে আনুমানিক ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক মূল্যায়নে মৎস্য চাষে আর্থিক ক্ষতি আনুমানিক ১২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার এবং পশুসম্পদে ক্ষতি ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এ রকম ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নতুন এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় মৌলিক পরিষেবা, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এবং দুর্যোগ ও জরুরি সাড়া দেওয়া সংক্রান্ত পরিষেবাগুলো নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া সড়ক ব্যবস্থা উন্নত করা, বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির মাধ্যমে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় দরিদ্র কমানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম