বিল্পবের ৩ মাস পূর্তিতে আসিফ মাহমুদ
তারুণ্যের রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সময় হয়েছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে জীবনদানকারী শহিদদের চেতনাকে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে সামনে আবির্ভূত করতে হবে। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে যখন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য শুনি তখন মনে হয়, ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার সময় হয়েছে।’ এটা তার ব্যক্তিগত চাওয়া বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে গণ-অভ্যুত্থানের ৩ মাস পূর্তির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অফিসার্স ক্লাব, ঢাকা আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বারী।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, তাদের (হতাহতদের) রাজনৈতিক যে আকাঙ্ক্ষা থেকে জীবন দেওয়া, এই হাত-পা হারানো, চোখ-কান হারানো, সেটা রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণরূপে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শঙ্কা করছি-এ রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, চব্বিশকে ধারণ করতে হবে। কারণ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ এ চব্বিশের তরুণরাই নির্মাণ করবে। চব্বিশের আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দলে গুরুত্ব দিতে হবে। তারা যে ম্যান্ডেট নিয়ে অভ্যুত্থান করেছে সেটি বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে হবে।
দেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক সচেতন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে যখন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তখন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কিছু অংশ বিরোধিতা করছে। তারুণ্যের যে স্পিরিটের জন্য তারা জীবন দিয়েছেন সেটাকে ধারণ করতে তারা (রাজনীতিবিদরা) ব্যর্থ হচ্ছেন।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের শেকড় অনেক গভীরে মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, বিগত ১৬ বছরে ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনে এমনটি হয়েছে। আমরা মাত্র সচিব, যুগ্ম সচিব পর্যন্ত পরিবর্তন করতে পেরেছি। কিন্তু প্রত্যেকটা দপ্তরে কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে। এসব নিয়োগে মেধা নয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের তালিকা মেনে করা হয়েছিল। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসরদের স্থলে সৎ, মেধাবী ও নিরপেক্ষ অফিসারদের দায়িত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে অফিসার্স ক্লাবের সদস্যদের তথ্য দিয়ে সহায়তার অনুরোধ করেন উপদেষ্টা।
অফিসার্স ক্লাবের সদস্য ও উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেটা কিভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই মতামত আপনারা কমিশনে দেবেন। ভবিষ্যতে প্রশাসনে যেন কোনো দলীয়করণ করতে কেউ সাহস না পায়, প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেন দলদাস হতে সাহস না পায়, কোনো জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে আপনাদের পরামর্শ প্রয়োজন। আপনাদের মতামত অনুযায়ী জনপ্রশাসন কমিশন সংস্কার নিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের ভেতরে কিছু অফিসার দলীয় নেতাদের থেকেও বেশি রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়ন করেছেন। আমি বিগত সরকারের সময় অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের কিছু তথ্য পেয়েছি। সেখানে তিনি বিভিন্ন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এই দায়িত্ব কিন্তু তার ছিল না। একই অবস্থা অন্যান্য সেক্টরেও। পেশাদারিত্বের যে অবক্ষয় হয়েছে, তা যেন আর না ঘটে সেটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছেন তারা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য জীবন দেননি। তারা জীবন দিয়েছেন একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের জন্য।
বাকস্বাধীনতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ফেসবুকে একটা পোস্ট দিতে গেলে এখন আর বারবার ভাবতে হচ্ছে না, ব্যাকস্পেস দিয়ে কেটে দিতে হচ্ছে না। আমরা ভয়হীনভাবে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারছি। রাষ্ট্র পুনর্গঠনে নিজেদের মতামত দিতে পারছি। সংস্কার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছি।