শিশুদের দেখভালে হাইকোর্টের নির্দেশ
জামিন পেলেন সেই চার শিশুর বাবা জামাল
যুগান্তর প্রতিবেদন ও কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যমজ দুই কন্যাশিশুর জন্মের এক সপ্তাহের মাথায় স্ত্রীর মৃত্যু। রয়েছে আরও দুই শিশু সন্তান। এমন এক অসহায় পরিস্থিতিতে হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দিনমজুর জামাল মিয়া অবশেষে জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ মামুন জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে মায়ের মৃত্যু, বাবা কারাগারে-এমন পরিস্থিতিতে তিন বোনকে নিয়ে ১৩ বছরের শিশু সাজ্জাদ চরম বিপাকে। এমন সংবাদ নজরে আনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে সেই শিশুদের দেখভালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকসহ সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তিন বোনকে নিয়ে ১৩ বছরের সাজ্জাদ চরম বিপাকে-এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদ আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চান এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই শিশুদের খাবার-দাবার ও সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আদেশ দেন। তিনি জানান, পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস যোগাযোগ করে আদালতকে জানায়, স্থানীয় প্রশাসন ওই শিশুদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। ওই শিশুদের অবস্থা সময়ে সময়ে তদারকি করে আদালতকে জানানো হবে। জানা যায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন চার সন্তানের জনক শ্রমিক জামাল মিয়া। তিনি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের চিত্রাপাড়া গ্রামের হারিজ মিয়ার ছেলে। গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায়।
সরেজমিন জানা গেছে, এক মাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম দুই যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জামাল। এছাড়া ঘরে রয়েছেন অসুস্থ মা। এ অবস্থায় পুলিশ জামাল মিয়াকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার জামালের আইনজীবী চামেলী আক্তার জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করে। বৃহস্পতিবার আদালত জামাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক হারুনুর রশিদ, সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রাকিবুল ইসলাম শুভ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার রাশেদুর রহমান চিত্রাপাড়া গ্রামে জামাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে নগদ টাকা, শিশুখাদ্য, গরম কাপড়, শিক্ষা উপকরণ, খেলনা সামগ্রী জামাল মিয়ার মা গোলেজান বেগমের হাতে তুলে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিবারটিকে নগদ অর্থ এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেন। জামাল মিয়ার জামিনের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তার পরিবারসহ পাড়া-প্রতিবেশী আনন্দে ফেটে পড়েন। জামাল মিয়ার মা গোলেজান বেগম তার ছেলের জামিনের খবর শুনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।