বিপ্লবী এক পুলিশ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান
বিপ্লবী এক পুলিশ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান। অন্যায় আদেশ না মানার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই দফা চাকরি হারিয়েছিলেন। একবার আদালতের নির্দেশে এবং আরেকবার সরকারের নির্বাহী আদেশে চাকরি ফিরে পেয়েছেন। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা জিল্লুরের ব্যাচমেটরা অনেক আগে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পেলেও তিনি ছিলেন বঞ্চিত। দুর্নীতি-দুঃশাসন, গুম-খুন ও নিপীড়ন-নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় এসপি পদে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় চাকরি হারান তিনি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফের যোগ দেন চাকরিতে। এসপি থেকে সরাসরি হন ডিআইজি। শিগ্গিরই অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন তিনি। পদোন্নতির পর দায়িত্ব নেবেন পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে অধ্যয়ন শেষে ১৯৮৯ সালে ২৩তম বিএমএ লং কোর্সে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট ক্যাডেট হিসাবে যোগ দেন। দুই বছরের সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে বিএসসি ইন মিলিটারি সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে সেনাবাহিনী থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার অ্যাট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক কারণে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আদালতের রায়ের মাধ্যমে ২০০২ সালে চাকরি ফিরে পান। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল-এই ১০ বছর তাকে পুলিশবাহিনীর তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলে ঢাকায় রাখা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় অপকর্মে জড়িত পুলিশ সদস্যদের সমালোচনা করতেন তিনি। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে একটি সাহসী গ্রুপ তৈরির চেষ্টা চালান। এ কারণে সরকার ২০২২ সালের নভেম্বরে তাকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। পরে সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
দেশ ছাড়লেও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট হিসাবে লড়াই করেছেন গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য। ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করার পর তিনি বলেছিলেন, ‘হাইকোর্টের এ রায় সংবিধানপরিপন্থি।’ একতরফা ও জালিয়াতির নির্বাচন, বিরোধী মত দমন ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি। কথা বলেন আওয়ামী লীগের আমলা আর প্রশাসননির্ভরতার বিরুদ্ধে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের প্রতিবাদ করেছেন আইনি বিশ্লেষণের মাধ্যমে। টকশোতে বক্তব্য দেন গুম-খুন, মিথ্যা-গায়েবি মামলা ও ‘সাজানো’ রায়ের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলগুলোকে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। বিদেশে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি পাচারকৃত টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে জোরালো বক্তব্য দিতেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২৭ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তাকে পুনরায় চাকরিতে বহাল করে।
জানতে চাইলে ডিআইজি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি ছোটবেলাতেই অনিয়ম, দুর্নীতি আর অপকর্মের বিরুদ্ধে দীক্ষা নিয়েছিলাম। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় এ দীক্ষা জোরালো হয়। পুলিশে যোগদানের পর থেকে নিজ আদর্শের সঙ্গে একটুও আপস করিনি। আপস না করার কারণেই একাধিকবার আমার চাকরি গেছে। অনেক লড়াই-সংগ্রামের পর চাকরি ফিরে পেয়েছি। এজন্য সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পেশাগত কাজে সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা যথাযথ পালনে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।